বাংলাদেশ

আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নেবে জাপান

Advertisement

জাপান সরকার ও দেশটির ব্যবসায়িক সংগঠনসমূহ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে এক লাখ শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দেশটিতে দিন দিন বাড়তে থাকা শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) টোকিওতে আয়োজিত এক সেমিনারে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

কর্মসংস্থান বিষয়ে ঐতিহাসিক ঘোষণা

বাংলাদেশ সেমিনার অন হিউম্যান রিসোর্সেস’ শীর্ষক এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী, জাপানি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সম্মেলনে জানানো হয়, জাপানে বর্তমানে ব্যাপক শ্রমিক সংকট চলছে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে এই সংকট বেড়ে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্তকে দেশটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে।

স্বাক্ষর হলো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক

সেমিনারে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দুইটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়:

  1. বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (BMET) এবং জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ কাইকম ড্রিম স্ট্রিট-এর মধ্যে।
  2. BMET ও জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস (যা ৬৫টির বেশি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে) এবং Japan-Bangla Bridge Recruiting Agency (JBBRA)-র মধ্যে।

এই সমঝোতা চুক্তিগুলোর মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও জাপানে সফলভাবে অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো ও সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য: এটি কর্মসংস্থান ও আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার বড় সুযোগ

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,

“বাংলাদেশ সরকার জাপানে কর্মসংস্থানের এই সুযোগ সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। এটি শুধু কর্মসংস্থানের নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের জন্য জাপানকে জানারও একটি বড় সুযোগ।”

তিনি আরও বলেন,

“বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের দেশ, যার অর্ধেকই ২৭ বছরের নিচে। এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে আমাদের দরজা খুলে দিতে হবে। বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে অভাবনীয় মেধা আছে, যেটিকে গড়ে তোলা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য: দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ

জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী সেমিনারে বলেন,

“বর্তমানে জাপানে যে শ্রমিক সংকট রয়েছে, তা ২০৪০ সালের মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ সুযোগে বাংলাদেশ আরও বেশি দক্ষ কর্মী পাঠিয়ে এই সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারে।”

রাষ্ট্রদূত আরও জানান, বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই জাপানে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ কোন খাতে?

জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া যেতে পারে বিভিন্ন খাতে, যেমন:

  • নার্সিং ও কেয়ারগিভার
  • নির্মাণ ও অবকাঠামো
  • কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ
  • হোটেল ও হসপিটালিটি
  • উৎপাদন ও ফ্যাক্টরি কর্ম
  • তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা

বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কী প্রস্তুতি দরকার?

জাপানে কাজ করতে আগ্রহী কর্মীদের প্রয়োজন:

  • ভাষাগত দক্ষতা (জাপানিজ ভাষা, JLPT N4 বা সমমান)
  • কারিগরি প্রশিক্ষণ (টেকনিক্যাল ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম বা Specified Skilled Worker পরীক্ষার প্রস্তুতি)
  • ন্যূনতম শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমান
  • সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব

এই কর্মসংস্থান উদ্যোগ বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম নতুন উৎস হতে পারে। বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। জাপানের মতো উচ্চ আয়ের দেশে কর্মী প্রেরণ দেশের আর্থিক নিরাপত্তা ও বৈদেশিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।

জাপানের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হওয়া নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। একদিকে যেমন এটি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে লাখো তরুণের জীবনে পরিবর্তন আনবে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হবে নতুন গতি ও সম্ভাবনা। সঠিকভাবে পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সুযোগকে বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগানো সম্ভব।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button