বাংলাদেশ

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন ১৫০ বাংলাদেশি

অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লিবিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন—অবশেষে সেই দুঃস্বপ্নের যাত্রার ইতি টেনে দেশে ফিরেছেন আরও ১৫০ জন বাংলাদেশি। মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় লিবিয়া পর্যন্ত পৌঁছানো এসব অভিবাসীর প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।

বেনগাজি থেকে ফিরে আসা দীর্ঘ যাত্রা

লিবিয়ার বেনগাজি শহর থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত আসতে আগ্রহী এসব বাংলাদেশিকে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে (বুরাক এয়ার) বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। আজ বুধবার (২৮ মে) দুপুরে তাঁদের ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইওএম কর্মকর্তারা তাঁদের স্বাগত জানান।

দালালের ফাঁদে পা দিয়ে সমুদ্রপথে ইউরোপ

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে ফেরত আসা অধিকাংশ বাংলাদেশি মূলত ইউরোপে অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্যে মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে লিবিয়ায় পৌঁছান। এই অভিবাসীরা অধিকাংশ সময়ই লিবিয়ার অভ্যন্তরে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটান। তাঁদের অনেকেই অপহরণ, নির্যাতন ও অর্থ আদায়ের চক্রে পড়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হন।

ফেরার পথে সহায়তা

ফেরত আসা প্রত্যেক অভিবাসীকে আইওএম-এর পক্ষ থেকে আর্থিক ও মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার টাকা, খাদ্যসামগ্রী, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের সুযোগ। সংস্থাটি জানিয়েছে, দেশে ফিরে অভিবাসীরা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন, সেজন্য এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই ভয়ংকর যাত্রা যেন আর কেউ বেছে না নেয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তারা বলেন, ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন কখনোই নিরাপদ বা বাস্তবসম্মত নয়। দালালরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে বিপজ্জনক যাত্রায় পাঠায়, যার শেষ হয় অপহরণ, যৌন নিপীড়ন, মৃত্যুঝুঁকি বা বন্দিদশায়।

লিবিয়ার ডিটেনশন সেন্টারে এখনও বহু বাংলাদেশি

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালায় এখনো বহু বাংলাদেশি আটক আছেন। তাঁদের নিরাপদে দেশে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আইওএম একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। অনেক সময় এসব বন্দিদের মুক্ত করতে জটিল আইনি প্রক্রিয়া, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় এবং উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে হয়।

কেন লিবিয়া হয়ে ইউরোপ?

লিবিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা নতুন নয়। বিশেষ করে ইতালি বা গ্রিসে পৌঁছাতে বহু বাংলাদেশি সমুদ্রপথে পাড়ি জমায়। তবে এই রুট ভয়ঙ্কর ঝুঁকিপূর্ণ ও মানবপাচারকারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এই পথে কয়েকশ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। লিবিয়া হয়ে ইউরোপ যাওয়ার হার গত কয়েক বছরে কিছুটা কমলেও দালালদের চক্র এখনও সক্রিয়।

সরকারের পদক্ষেপ

বাংলাদেশ সরকার অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়াও বৈধ চ্যানেলে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দক্ষতা উন্নয়ন ও বিদেশে বৈধ চাকরির সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে তরুণদের নিরাপদ অভিবাসনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতামত

অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অবৈধ পথে যাওয়া শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণ নয়, বরং দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ করে। তাঁরা মনে করেন, যেসব এলাকা থেকে এসব অভিবাসী যাচ্ছেন (যেমন মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সেখানে স্থানীয় প্রশাসন, এনজিও ও মিডিয়া একযোগে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালালে এর নেতিবাচক প্রভাব কমানো সম্ভব।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button