আঞ্চলিক

নিরাপত্তারক্ষীদের বেঁধে চিনিকলে ডাকাতি, ট্রাক ভরে নিয়ে গেল মাল

Advertisement

 নাটোরে সরকারি চিনিকলে ভোররাতে সংঘটিত হয়েছে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা। দুর্বৃত্তরা নিরাপত্তারক্ষীদের বেঁধে রেখে ট্রাকে করে বিপুল পরিমাণ মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে, তবে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ পরিমাণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ঘটনার বিস্তারিত

চোখ ধাঁধানো এই ডাকাতি ঘটে রবিবার ভোররাতে। নাটোর শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত সরকারি চিনিকলে একটি ছোট ট্রাকে করে ৮-১০ জনের একটি দল ঢুকে পড়ে। তারা প্রথমে কারখানার ভেতরে দায়িত্বরত আনসার সদস্য এবং নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর দ্রুত ভেতরের বিভিন্ন গুদাম ও স্টোরেজ থেকে মালামাল ট্রাকে তুলে নেয়। ডাকাত দলের সদস্যরা সুসংগঠিতভাবে কাজ করায় পুরো ঘটনা ঘটে প্রায় ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে।

পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতদের পরিকল্পনা খুবই পেশাদার ধরনের ছিল। তারা কারখানার ভেতরে থাকা সিসিটিভি ফুটেজেরও কিছু অংশ নষ্ট করার চেষ্টা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্ধারে পুলিশ

ডাকাতরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর স্থানীয়রা চিনিকলের ভেতরে অস্বাভাবিক নড়াচড়া লক্ষ্য করলে বিষয়টি থানায় জানানো হয়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের বাঁধন খুলে উদ্ধার করে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বলেন, “ঘটনার পরপরই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এখন পর্যন্ত ছয়জন নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাকি সবাইকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অপরাধীদের শনাক্ত করতে একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।”

ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো চূড়ান্ত নয়

চিনিকল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডাকাতরা ঠিক কতটুকু মালামাল নিয়ে গেছে তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখলাছুর রহমান বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, গুদামে মজুত থাকা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মালামাল নিয়ে গেছে। আমাদের কর্মীরা বর্তমানে তালিকা প্রস্তুত করছে। চূড়ান্ত হিসাব না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে পারছি না।”

পূর্বে কি এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে?

স্থানীয়রা জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে নাটোরের এই চিনিকলে এমন বড় ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। যদিও এর আগে ছোটখাটো চুরির ঘটনা ঘটেছে, তবে এত সুপরিকল্পিত ডাকাতি এই প্রথম। এলাকাবাসীর মতে, রাতে চিনিকলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কিছু দুর্বলতা থাকায় দুর্বৃত্তরা এই সুযোগ নিয়েছে।

এলাকাবাসীর আতঙ্ক ও প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার পর স্থানীয় এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই বলছেন, যদি এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি স্থাপনায় এমন ডাকাতি সম্ভব হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, রাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত?

তদন্তের অগ্রগতি ও পুলিশের পদক্ষেপ

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। একইসঙ্গে শহরের প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তার ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় কোন পথে গেছে তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পুলিশ সুপার আশাবাদী, দ্রুতই অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি বা শিল্প কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ অত্যন্ত জরুরি। তাদের মতে, শুধুমাত্র প্রহরী নিয়োগ করলেই হবে না; উন্নতমানের সিসিটিভি মনিটরিং, অ্যালার্ম সিস্টেম এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে ঠেকাতে হলে প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে যেতে হবে। শুধু জনবল দিয়ে এত বড় শিল্প কারখানা সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয়।”

সারসংক্ষেপ  

 রোববার ভোরে নাটোরের একটি চিনিকলে একদল দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে নিরাপত্তারক্ষীদের বেঁধে ফেলে। এরপর তারা কারখানার ভেতরে থাকা মালামাল ট্রাকে ভরে নিয়ে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্ধার করে এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লুট হওয়া মালামালের হিসাব তৈরির কাজ চলছে।

নাটোরের সরকারি চিনিকলে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনাটি পুরো জেলাজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। এই ঘটনার ফলে কারখানার ক্ষতি যেমন হয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী পরবর্তী দিনগুলোতে আরও তথ্য জানা যাবে। প্রশ্ন উঠছে—সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত নয়?

এম আর এম – ০৬৬৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button