লঞ্চে দুই তরুণীকে বেল্ট দিয়ে মারধরের ঘটনায় মামলা, ২৫ জন আসামি

মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর লঞ্চঘাটে নোঙর করা একটি লঞ্চে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে বেল্ট দিয়ে মারধরের ঘটনায় এক যুবকসহ অজ্ঞাত ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাল ভিডিওর সূত্র ধরে এ মামলাটি রোববার সকালে দায়ের করে নৌ পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটে রাজধানী ঢাকাগামী এমভি ক্যাপ্টেন নামের একটি লঞ্চে। ভিডিওতে দেখা যায়, দুই তরুণীকে লঞ্চের সামনের অংশে টেনে তুলে বেল্ট দিয়ে বেধড়ক মারধর করছেন এক তরুণ। আশপাশে জড়ো হওয়া লোকজন চিৎকার করে উল্লাস করছে এবং কেউ কেউ ভিডিও ধারণ করছে। ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
মূল অভিযুক্ত জিহাদ গ্রেপ্তার, মামলা নৌ পুলিশের
এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকের নাম নেহাল আহমেদ ওরফে জিহাদ (২৩)। তিনি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা। শনিবার দুপুরে নেহাল নিজে থেকেই সদর থানায় গেলে পুলিশ তাঁকে আটক করে।
আজ রোববার সকালে মুক্তারপুর নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিলন বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় যৌন নিপীড়ন, বেআইনি প্রবেশ, মারধর, লঞ্চ ভাঙচুর ও হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে। নেহালকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০–২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
থানায় আসেননি ভুক্তভোগী তরুণীরা, অভিযোগও দেয়নি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, “ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর শনিবার নেহালকে থানায় আসতে বলা হয়, তিনি নিজে উপস্থিত হন এবং আমরা তাঁকে আটক করি। ঘটনার ভুক্তভোগী দুই তরুণীকে থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তাঁরা কেউ আসেননি। একইভাবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকেও অভিযোগ দিতে বলা হয়, তারাও আসেনি।”
ওসি আরও জানান, “তবে ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে নৌ পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি তদন্ত করবে নৌ পুলিশের একটি বিশেষ দল। গ্রেপ্তার নেহাল আহমেদকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।”
ভিডিওতে যা দেখা গেছে
ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে শনিবার সন্ধ্যার পর। সেখানে দেখা যায়, ‘এমভি ক্যাপ্টেন’ লঞ্চের ডেকের সামনে দুই তরুণী দাঁড়িয়ে আছেন, আর একজন যুবক—পরবর্তীতে যিনি নেহাল আহমেদ বলে শনাক্ত হন—তাঁদের পিঠের দিকে বেল্ট দিয়ে লাগাতার আঘাত করছেন। আশপাশের কিছু লোক হাসাহাসি করছে এবং মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছে। কারও পক্ষ থেকে তরুণীদের রক্ষা করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং উৎসাহী জনতা পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তোলে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা
এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অনেকেই অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন—পূর্বপরিকল্পিত না হলে প্রকাশ্য জনসম্মুখে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে?
নারী অধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও এই ঘটনার কঠোর বিচার দাবি করা হয়েছে। সামাজিকভাবে এমন বর্বর আচরণের প্রেক্ষিতে সরকারের তরফে আরও সক্রিয়তা দাবি করেছেন অনেকে।
আইন অনুযায়ী শাস্তির সম্ভাবনা
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। পাশাপাশি শারীরিক হামলা ও হুমকির জন্য ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে অতিরিক্ত সাজাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
প্রশাসনের অগ্রাধিকার: “তদন্তে কোনো গাফিলতি হবে না”
মুন্সিগঞ্জ নৌ পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “ভিডিও এবং অন্যান্য তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে মামলার দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশ। অচেনা ২০-২৫ জন যাদের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের শনাক্ত করতেও প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।”