চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে আরও চার মামলায় গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসকে পুলিশের কাজে বাধা, ভাঙচুর এবং অন্যান্য অভিযোগে আরও চারটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে এই আদেশ দেন।
মামলার পটভূমি
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন জানান, চিন্ময় দাসকে কোতোয়ালি থানার পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা চারটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আইনজীবীর অনুপস্থিতি
শুনানিতে চিন্ময় দাসের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর আইনজীবী শুভাশীষ শর্মাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এর আগে, গত সোমবার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।
আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার দেখানোর ভার্চুয়াল শুনানিকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালত ভবনের প্রবেশমুখে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। চট্টগ্রাম কারাগারের সামনেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়।
সাইফুল হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট
গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়। মোট ছয়টি মামলায় ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।
আসামিদের স্বীকারোক্তি
আদালত সূত্রে জানা যায়, সাইফুল হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস এবং কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি প্রতিফলন। আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এই ঘটনার পর আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের