গাজীপুরে ঝুটগুদামে আগুন, ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টা চলছে

গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানার অন্তর্গত দেওয়ালিয়াবাড়ী এলাকায় একটি ঝুটগুদামে শনিবার দুপুরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা। আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা গুদামে, ফলে এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট। কোনাবাড়ী মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
কীভাবে আগুন লাগল, এখনও নিশ্চিত নয় কেউ
তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার সঠিক কারণ জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, গুদামে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য ঝুট (গার্মেন্টস থেকে উৎপন্ন বর্জ্য) মজুত ছিল, যা আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী হতে পারে।
ওয়্যার হাউস ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম জানান, “খবর পেয়ে আমাদের তিনটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। আগুন যাতে আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি।”
ঝুটগুদামের আশপাশে আতঙ্ক
দেওয়ালিয়াবাড়ী এলাকাটি মূলত শিল্পাঞ্চলঘেঁষা, যেখানে অনেকগুলো ছোট-বড় গার্মেন্টস, গুদাম এবং ঝুটের ব্যবসা পরিচালিত হয়। আগুন লাগার পর আশপাশের বাসিন্দারা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে শুরু করেন। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মিয়া বলেন, “আগুন অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা ভয়ে পাশের ঘর-বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি।”
আগুনের প্রভাব ও সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি
ঝুটগুদামে প্রচুর পরিমাণে কটন ও সিনথেটিক ঝুট থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। এখনো পর্যন্ত প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি, তবে লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আগুনে অন্তত কয়েক হাজার বস্তা ঝুট পুড়ে গেছে বলে ধারণা করছি। এটা একাধিক ব্যবসায়ীর মাল মজুদ ছিল।”
ঝুট ব্যবসা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি
গাজীপুরে ঝুট ব্যবসা একটি লাভজনক খাত হলেও এটি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। বেশিরভাগ ঝুটগুদামে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নেই। অল্প স্পার্ক বা বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। অথচ এসব গুদাম অনেক সময়ই আবাসিক এলাকা ঘেঁষে তৈরি করা হয়, যা ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
স্থানীয় নাগরিকদের মতে, বহু ঝুটগুদামে নিয়মিত অগ্নি নির্বাপন মহড়া হয় না এবং অধিকাংশই ফায়ার লাইসেন্স ছাড়াই পরিচালিত হয়।
প্রশাসনের ভূমিকা ও তদন্তের প্রস্তুতি
ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর বিস্তারিত তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের একটি দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং সম্ভাব্য নাশকতা বা অবহেলার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছি যাতে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত মাল লুট বা অন্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে।”
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর পরবর্তী করণীয়
আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসন যৌথভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করবে এবং তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। যদি কোনো অবহেলা বা লাইসেন্স সংক্রান্ত ত্রুটি পাওয়া যায়, তাহলে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সূত্রে জানা গেছে।
বারবার ঘটছে এমন দুর্ঘটনা: সমাধান কোথায়?
গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ঝুটগুদামে আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়। আগেও একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটেছে, তবে প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে একই ভুল বারবার ঘটছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
- ঝুটগুদামে নিয়মিত অগ্নি নিরাপত্তা পরিদর্শন চালাতে হবে
- দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলতে হবে
- শিল্পাঞ্চলের মধ্যে আবাসিক এলাকা ঘেঁষে ঝুটগুদাম রাখা নিষিদ্ধ করা উচিত
গাজীপুরের দেওয়ালিয়াবাড়ীতে ঝুটগুদামে আগুন লাগার ঘটনাটি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি আমাদের শিল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাও তুলে ধরেছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের শনাক্ত করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে, ব্যবসায়ীদেরও অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করা এবং নিয়ম মেনে চলার বিষয়ে সচেতন হতে হবে।