
চীন শুক্রবার (৪ জুলাই) তিব্বত ইস্যুতে ভারতের হস্তক্ষেপকে কঠোর ভাষায় নাক গলিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছেন, তিব্বতকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লির অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ চীন-ভারত সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হুঁশিয়ারি
মাও নিং স্পষ্ট করে বলেন, তিব্বত চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারত যদি এই বিষয়ে অনধিকার প্রবেশ করে, তাহলে তা দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, “নয়াদিল্লি যেন তিব্বত নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করে দেয়। এটা দুই দেশের সুসম্পর্ক রক্ষায় অপরিহার্য।”
তিব্বতের ‘নির্বাসিত সরকার’ নিয়ে চীনের কঠোর মন্তব্য
চীনের মুখপাত্র আরও বলেন, তিব্বতের তথাকথিত নির্বাসিত সরকার বা ‘তিব্বত নির্বাসিত সরকার’ আসলে বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী। তারা নানা মিথ্যাচার ও গুজব ছড়িয়ে তিব্বত ইস্যুকে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা করে। এর ফলে চীন-ভারতের সম্পর্কেও প্রভাব পড়ছে। মাও নিং বলেন, “এই গোষ্ঠীর কোন বিশ্বাসযোগ্যতা নেই এবং ভারত যেন তাদের কথায় বিভ্রান্ত না হয়।”
ভারত-চীন সম্পর্কের প্রেক্ষাপট
তিব্বত ইস্যু শতাব্দীর পুরোনো একটি সমস্যা, যা চীন-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে আসছে। ১৯৫৯ সালের তিব্বত বিদ্রোহের পর থেকে তিব্বতকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ভারতের কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপ বৃদ্ধি পায়। ভারতীয় সীমান্তে অবস্থিত তিব্বতীয় শরণার্থীরা এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।
তবে, চীন সবসময় তিব্বতকে নিজের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দাবি করে এসেছে এবং ভারতকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার পরামর্শ দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্ত বিবাদের কারণে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। এর মধ্যেই তিব্বত ইস্যুতে ভারতীয় পক্ষের কোন কথাবার্তা চীনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে তিব্বত ইস্যু
তিব্বত ইস্যু আন্তর্জাতিক মঞ্চেও গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো চীনের তিব্বতে মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। ভারত এসব অভিযোগকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। কিন্তু চীন এই অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করে।
বিশ্লেষকদের মতে, তিব্বত ইস্যু চীন-ভারত সম্পর্কের অন্যতম সংবেদনশীল বিষয়। যদি দুই দেশ এই ইস্যুতে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করতে না পারে, তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বাভাবিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে।
চীনের দৃষ্টিকোণ: অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ মানা
চীনের মতে, তিব্বত চীনের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক অংশ। তাই এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, যার মধ্যে অন্য কোন দেশ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। মাও নিং বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করি ভারত সরকার এই বিষয়ে বিচক্ষণতা প্রদর্শন করবে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করবে।”
ভারতীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া কী?
এখনও পর্যন্ত ভারত সরকারের পক্ষ থেকে চীনের এই সতর্কতার বিষয়ে কোনও অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, ভারত তার বিদেশ নীতি ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী তিব্বত ইস্যুতে নীরব থাকলেও প্রতিবেশী দেশটির সতর্কতা বিবেচনা করবে।
ভবিষ্যৎ কী?
চীন-ভারত সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য সংলাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। তিব্বত ইস্যুতে ভারতে বেশি হস্তক্ষেপ হলে তা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে চীনের হুঁশিয়ারি ভারতের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা, যার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে নয়াদিল্লিকে। দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও কূটনৈতিক সংলাপ বজায় থাকলেই আঞ্চলিক শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।