বাংলাদেশ

ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ থেকে ভাঙচুর–লুটের ঘটনায়, ৪৯ জন গ্রেপ্তার

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বর্বর হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ কর্মসূচি কিছু এলাকায় রূপ নেয় সহিংসতায়। খুলনা, সিলেট, গাজীপুরসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ থেকে একাধিক আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি ও দেশীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

বিক্ষোভ থেকে ভাঙচুর: কোথায় কী ঘটেছে

খুলনা: একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠানে হামলা

খুলনা নগরের ময়লাপোঁতা ও শিববাড়ী এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালানো হয় কেএফসি, ডোমিনোজ পিৎজা এবং বাটা শোরুমে। কেএফসি ও ডোমিনোজ একই ভবনে অবস্থিত। ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) তথ্য অনুযায়ী, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও অভিযুক্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।

সিলেট: ১০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানে হামলা

সিলেট নগরের দরগাহ গেট, মিরবক্সটুলা ও আশপাশের এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্তত ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিক্ষোভকারীরা কেএফসি, বাটা, ইউনিমার্ট, আলপাইন রেস্তোরাঁসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সিলেট কোতোয়ালি থানার তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে, আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গাজীপুর: বোর্ডবাজারে হামলা ও গ্রেপ্তার

গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল থেকে বাটা শোরুম ও তিনটি রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে গাছা থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন—

  • সিয়াম খান (১৮), নোয়াখালী
  • শিমুল আহমেদ (২০), ময়মনসিংহ
  • মো. শাহিন (১৯), শরীয়তপুর
  • জয়নাল আবেদীন (২১), গাজীপুর

তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।

পুলিশের বক্তব্য ও তদন্ত অগ্রগতি

পুলিশ সদর দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়,

“ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি ও ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচির পবিত্রতা নষ্ট করে কেউ যেন নৈরাজ্য সৃষ্টি না করতে পারে, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সহিংসতার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ, ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কেন এই হামলা: আন্দোলন না নাকি পরিকল্পিত সহিংসতা?

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও নাগরিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পক্ষে থাকলেও, কিছু জায়গায় সংগঠিত হামলার ধরন দেখে প্রশ্ন উঠেছে—এই ভাঙচুর সাংগঠনিক নাকি প্ররোচিত? বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের শিকার, তাদের বেশিরভাগই পশ্চিমা মালিকানাধীন বা আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি

এক নজরে গ্রেপ্তার ও ঘটনা তালিকা

এলাকাক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগ্রেপ্তারমামলা
খুলনাকেএফসি, ডোমিনোজ, বাটা৩১ জনতদন্তাধীন
সিলেটকেএফসি, বাটা, ইউনিমার্ট, রেস্তোরাঁ১৪ জনচলমান
গাজীপুরবাটা ও রেস্তোরাঁ৪ জনদায়ের হয়েছে

ফিলিস্তিনের পক্ষে একাত্মতা জানানো মানবিক দায়িত্ব। তবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মধ্যে ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো অপরাধ আন্দোলনের আবেদনকেই দুর্বল করে। মানবিক প্রতিবাদ যেন কোনোভাবেই সহিংসতায় পরিণত না হয়, এটাই আজ সময়ের দাবি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button