ওমানের দুকুম সিদরা এলাকায় একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সাতজন প্রবাসী বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে ঘটে এই দুর্ঘটনা। এর মধ্যে ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার বিশদ বিবরণ
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, নিহতরা সাগরে মাছ ধরার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। মাছ ধরা শেষ করে ফেরার পথে একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে উল্টে যায়। এতে কয়েকজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং বাকিরা হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রাণ হারান। মরদেহগুলো বর্তমানে দুকুম হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। তারা হলেন:
- মোহাম্মদ আমিন সওদাগর, ছেলে আলী আকবার সেরাং
 - আরজু, ছেলে শহীদ উল্লা
 - মোহাম্মদ বাবলু, ছেলে মনু মিয়া
 - সাহাব উদ্দিন, ছেলে সিদ্দিক আহমেদ
 - মোহাম্মদ রকি, ছেলে ইব্রাহিম মিস্ত্রি
 - জুয়েল, ছেলে জামাল উদ্দিন
 
বাকি একজনের পরিচয় শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে।
প্রবাসী সম্প্রদায় ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সন্দ্বীপে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র দুঃখ বিরাজ করছে। সারিকাইতের এক বাসিন্দা জানান, নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য ছিলেন। এই দুর্ঘটনার খবর তাদের জন্য সহ্য করা অত্যন্ত কঠিন।
ওমানে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা জানান, মৃতদের মরদেহ দেশে প্রেরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাসও বিষয়টি তদারকি করছে।
দুর্ঘটনা
দুকুম সিদরা এলাকাটি প্রায়শই মাছ ধরার জন্য বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভ্রমণপথে পড়ে। এখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ ধরা এবং স্থানীয় জাহাজে কর্মরত বাংলাদেশিরা নিয়মিত আসে। দুর্ঘটনার সময় নিহতরা সাগরে কাজ শেষে আবাসস্থলে ফিরছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়কের খারাপ অবস্থা, যানবাহনের তীব্র গতি এবং পর্যাপ্ত সড়ক নিরাপত্তার অভাব এই ধরনের দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে।
প্রভাব ও ফলাফল
এই দুর্ঘটনা শুধু প্রবাসী পরিবারগুলোর জন্য নয়, পুরো কমিউনিটির জন্য বড় ধাক্কা। নিহতরা প্রায়শই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য ছিলেন, ফলে তাদের মৃত্যু অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ফেলতে পারে। স্থানীয়দের মতে, দুর্ঘটনার পরে অনেকেই এখন অতিরিক্ত সতর্ক ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করার জন্য সচেতন হয়েছে।
ওমান প্রবাসী কমিউনিটি এবং স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাস নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সমর্থন প্রদানের চেষ্টা করছে।
তুলনা ও পরিসংখ্যান
এটি গত কয়েক মাসে ওমানে ঘটে যাওয়া অন্যতম মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সড়ক নিরাপত্তা এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এই ধরনের দুর্ঘটনার হার কমানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং দূতাবাস নিয়মিত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
বিশেষজ্ঞ ও কূটনৈতিক মন্তব্য
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করতে সড়ক ব্যবস্থাপনা, যানবাহনের মান নিয়ন্ত্রণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাসও এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন করছে।
এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কেবল দূতাবাসের নয়, বরং সড়ক ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় প্রশাসনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।”
নিহতদের মরদেহ দেশে প্রেরণের পর তাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসবে। স্থানীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ও এই দুর্ঘটনার প্রভাব অনুভব করবে। দীর্ঘমেয়াদে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নিরাপদ পরিবহন এবং সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধি এ ধরনের দুর্ঘটনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসীদের সচেতনতা এবং স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
এম আর এম – ১৬৯১,Signalbd.com
				
					


