দুবাই থেকে অবৈধভাবে এসেছে ৩২ হাজার কোটি টাকার সোনা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাই প্রতিবছর বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ সোনার বার রপ্তানি করে। তবে বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমিরাত থেকে সোনা আমদানি হয় খুব সামান্য। এই গরমিলের কারণ হলো, বেশিরভাগ সোনার বার অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করে। ফলে বাংলাদেশ রাজস্ব হারাচ্ছে এবং অপরাধ ও চোরাচালানে এই সোনা ব্যবহৃত হচ্ছে।
অবৈধ সোনা-বাণিজ্যের পরিসংখ্যান
জাতিসংঘের পশ্চিম এশিয়াবিষয়ক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইএসসিডব্লিউএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ৩৬৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের সোনা রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে। বিশ্বব্যাংকের গড় মূল্য ধরে হিসাব করলে, এই পরিমাণ সোনা ৭৮ টন বা ৭৮ হাজার কেজির বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর মূল্য প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব অনুযায়ী, এই ১০ বছরে বৈধ পথে মাত্র ৮২ লাখ ডলার মূল্যের সোনা আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ, ৩৬৫ কোটি ৮২ লাখ ডলারের সোনা বৈধভাবে দেশে ঢোকেনি।
সোনা আমদানির পথ
বাংলাদেশে সোনা আসে তিনভাবে:
- যাত্রীদের হাত ধরে
- বৈধভাবে ব্যবসায়ীদের আমদানির মাধ্যমে
- অবৈধভাবে
যাত্রীদের মাধ্যমে আনা সোনা আনুষ্ঠানিক আমদানি হিসেবে গণ্য হয় না। এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, যাত্রীদের মাধ্যমে সোনা আসা বেড়েছে গত চার বছরে। ২০১৯ সালে আরব আমিরাত থেকে ৬০ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের সোনা রপ্তানি হয়েছে, কিন্তু যাত্রীরা এনেছেন মাত্র ১৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের সোনা।
অবৈধ বাণিজ্যের প্রভাব
অবৈধভাবে আনা সোনা জব্দের ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। ২০২৩ সালে তিন বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ৮৮৪ কেজি সোনা জব্দ করেছে। সোনা ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের ধারণা, যে পরিমাণ সোনা ধরা পড়ছে, তা অবৈধভাবে আনা সোনার সামান্য অংশ।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) গত বছরের জুনে দাবি করেছে, বছরে ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার সোনা ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে।
সোনা পাচারের চক্র
বিশ্বজুড়ে অবৈধ বাণিজ্যের লেনদেন ও নানা দেশে সশস্ত্র গোষ্ঠীর অর্থায়নে সোনা ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েস সবচেয়ে বেশি হয় ভারতের সঙ্গে।
জরুরি ভিত্তিতে তদন্তের প্রয়োজন
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে যে পরিমাণ সোনা রপ্তানি হচ্ছে, তা বাংলাদেশের হিসাবে নেই—এটা খুবই উদ্বেগজনক তথ্য। জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করা দরকার।”
দুবাই থেকে অবৈধভাবে আসা সোনার পরিমাণ এবং এর প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গভীর উদ্বেগের বিষয়। অবৈধ সোনা-বাণিজ্য রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সরকারের উচিত এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা এবং সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা। সোনা পাচার ও অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে হলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও প্রয়োজন।