আঞ্চলিক

ফরিদপুরে ইজিবাইক চালক হত্যায় পাঁচ জনের ফাঁসি

Advertisement

ফরিদপুরে ইজিবাইক চালক শওকত মোল্লা হত্যার এক ব্যতিক্রমী মামলায় পাঁচ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালত, মাকসুদুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

হত্যাকাণ্ডের পেছনের কাহিনী

২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটায় শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার যুবক শওকত মোল্লা ইজিবাইক চালিয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন ১৫ নভেম্বর সকালে ফরিদপুর শহরের মোল্লাবাড়ি সড়কের পাশে একটি ধানক্ষেতে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনা সারা এলাকায় ব্যাপক শোক ও আলোড়ন সৃষ্টি করে। শওকত মোল্লা ছিলেন ওই এলাকার একজন পরিশ্রমী যুবক, যিনি পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য ছিলেন।

তদন্তে উঠে আসে, শওকতকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে এবং তার ইজিবাইক ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করা হয়েছে, যার মোট মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা।

মামলা ও বিচার কার্যক্রম

শওকতের বাবা আয়নাল মোল্লা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ১৬ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তের মাধ্যমে কয়েক মাস পর পাঁচজন আসামির নাম চিহ্নিত হয়।

আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুর অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড এবং এক আসামির বিরুদ্ধে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন:

  • মেহেদী আবু কাওসার (পশ্চিম খাবাসপুর, ফরিদপুর)
  • জনি মোল্লা (পশ্চিম খাবাসপুর, ফরিদপুর)
  • আবু রাসেল শেখ (পলাতক, পশ্চিম খাবাসপুর)
  • রাজেশ রবিদাস (রবিদাসপল্লি)
  • রবিন মোল্লা (গোয়ালচামট মহল্লা)

অপরদিকে, রাজবাড়ীর মসলিসপুর গ্রামের বাদশা শেখকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং জরিমানা অনাদায়ে আরও ১০ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রায় ও এর গুরুত্ব

রায় ঘোষণার সময় পাঁচ আসামির মধ্যে একজন বাদে সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পরে পুলিশ তাদের ফরিদপুর জেলা কারাগারে নিয়ে যায়।

ফরিদপুর জেলা আদালতের সরকারপক্ষের কৌঁসুলি চৌধুরী জাহিদ হাসান জানান, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে হত্যার ঘটনা দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই রায় সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে কাজ করবে এবং অপরাধীদের জন্য এক কঠোর সতর্কবার্তা বহন করবে।

ইজিবাইক চালকদের নিরাপত্তা সংকট

বর্তমানে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে ইজিবাইক চালকদের নিরাপত্তা সংকট প্রকট রূপ ধারণ করেছে। মূলত ইজিবাইক চালকরা দারিদ্র্যসীমার নিচে আছেন এবং তারা প্রায়শই ছিনতাই ও সহিংসতার শিকার হন। শওকত মোল্লার হত্যাকাণ্ড এ ধরনের অপরাধের প্রামাণ্য উদাহরণ।

সমাজের দায়িত্ব ও প্রশাসনের ভূমিকা

এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সমাজে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রশাসনের ভূমিকা এবং সঠিক আইন প্রয়োগের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে। অপরাধী দমনের জন্য কঠোর আইন ও দ্রুত বিচার প্রয়োজন।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বজায় থাকে। বিশেষ করে যেসব পেশাজীবী ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেন, তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা জরুরি।

সংক্ষিপ্ত পয়েন্ট আকারে রায়ের সারাংশ:

  • মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি: ৫ জন
  • সশ্রম কারাদণ্ড: ১ জন (১০ বছর)
  • জরিমানা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা, কারাদণ্ডপ্রাপ্তকে ১০ হাজার টাকা
  • অতিরিক্ত সাজা: জরিমানা অনাদায়ে ১০ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড
  • অপরাধ: ইজিবাইক চালক শওকতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ও ছিনতাই

ইজিবাইক চালকদের ওপর হামলা এবং হত্যার সমস্যা কেন বাড়ছে?

বাংলাদেশে ইজিবাইক চালকদের ওপর হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক দুরবস্থা, আইন শৃঙ্খলার অভাব এবং অপরাধীদের স্বচ্ছল পরিবেশ। অধিকাংশ ইজিবাইক চালক তরুণ ও দরিদ্র পরিবার থেকে আসে, যারা পারিবারিক জীবনের বোঝা সামলাতে গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করেন।

অপরাধীরা প্রায়শই তাদের টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিতে ভয়াবহ সহিংসতা চালায়, যা মাঝে মাঝে হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়। এটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তির নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

ফরিদপুরে বিচারিক ব্যবস্থা ও ন্যায়বিচারের অগ্রগতি

ফরিদপুর জেলা আদালত দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শওকত মোল্লার মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এই বিষয়ে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

আইনজীবী ও প্রশাসনের সতর্ক বার্তা হলো, অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিয়ে অপরাধ প্রবণতা কমানো সম্ভব। এজন্য আরও বেশি বিচারিক সংস্থান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ ভূমিকা প্রয়োজন।

শওকত মোল্লার পরিবার ও এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া

শওকত মোল্লার পরিবার এই রায়কে ন্যায়বিচারের সাফল্য হিসেবে দেখছে। শওকতের বাবা আয়নাল মোল্লা বলেন, “আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল শওকতের হত্যাকাণ্ড। আজকের রায় আমাদের হৃদয়কে কিছুটা শান্তি দিয়েছে। আমরা চাই যেন অন্য কারো সাথে এমন ঘটনা না ঘটে।”

এলাকাবাসীও এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলছেন, “এই রায় অপরাধীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। আমরা চাই আইনের আওতায় সকল অপরাধীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”

ভবিষ্যতের জন্য করণীয়

  • ইজিবাইক চালকদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বিধান চালু করা
  • অপরাধ দমন ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা
  • দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ
  • চালকদের সচেতনতা ও আইনি সুরক্ষা প্রদান

ফরিদপুরে ইজিবাইক চালক শওকত মোল্লার নির্মম হত্যাকাণ্ডের মামলায় পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও এক জনকে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। আদালতের কঠোর রায় সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদাহরণ হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এই রায় ইজিবাইক চালকদের নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।

 MAH – 12057, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button