ফ্যাক্ট চেক

গোপনে মস্তিষ্ককে ক্ষতি করে এমন ১০টি অভ্যাস, এড়িয়ে চলার উপায়

Advertisement

মস্তিষ্ক আমাদের শরীরের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। প্রতিদিনের চিন্তা, অনুভূতি, সিদ্ধান্ত ও স্মৃতির পেছনে মস্তিষ্কই প্রধান ভূমিকা পালন করে। কিন্তু অনেক সময় আমরা না জেনেই এমন কিছু অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ি, যা ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। সুখবর হলো — এই অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করতে পারলে এবং সামান্য পরিবর্তন আনতে পারলে দীর্ঘদিন মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখা সম্ভব।

নীচে এমন ১০টি সাধারণ অভ্যাস এবং সেগুলো থেকে বাঁচার উপায় তুলে ধরা হলো।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব

প্রতিদিন ৭–৯ ঘণ্টা মানসম্মত ঘুম মস্তিষ্কের জন্য অপরিহার্য। ঘুমের গভীর পর্যায়ে মস্তিষ্ক ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে এবং স্মৃতিকে স্থায়ী করতে কাজ করে। ঘুম কম হলে মনোযোগ কমে, চিন্তাভাবনা ধীর হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে আলঝেইমারসহ স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ে।

 সমাধান: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে শোয়া ও ওঠার অভ্যাস করুন, ঘুমানোর আগে স্ক্রিন ব্যবহার কমান এবং শান্ত পরিবেশে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

দীর্ঘ সময় বসে থাকা

অতিরিক্ত সময় বসে থাকার ফলে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টির সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে শেখার ক্ষমতা ও স্মৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সমাধান: প্রতি ৩০–৪০ মিনিট পরপর উঠে দাঁড়ান, হাঁটাচলা করুন অথবা হালকা স্ট্রেচিং করুন। কর্মক্ষেত্রে সম্ভব হলে সিট-স্ট্যান্ড ডেস্ক ব্যবহার করুন।

একসঙ্গে অনেক কাজ করার চেষ্টা

মাল্টিটাস্কিং শুনতে কার্যকর মনে হলেও বাস্তবে এটি মস্তিষ্কের ওপর চাপ বাড়ায় এবং মনোযোগ বিভক্ত করে দেয়। একসঙ্গে একাধিক কাজে লাফালাফি করলে মানসিক ক্লান্তি ও ভুলের সম্ভাবনা বাড়ে।

সমাধান: এক সময়ে একটি কাজের প্রতি মনোযোগ দিন এবং সেটি শেষ করার পর পরবর্তী কাজে যান।

অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস

প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও ক্ষতিকর চর্বি মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং বার্ধক্য দ্রুত বাড়ায়। অপরদিকে, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ, শাকসবজি, ফল, বাদাম ও বীজ মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

সমাধান: জাঙ্ক ফুড ও অতিরিক্ত চিনি কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।

দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ

দীর্ঘ সময় মানসিক চাপ থাকলে কোর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হিপোক্যাম্পাসের ক্ষতি করে—এটি স্মৃতি ও শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সমাধান: প্রতিদিন মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, ডায়েরি লেখা বা পছন্দের কোনো শখে সময় দিন। নিয়মিত ব্যায়ামও চাপ কমাতে সহায়ক।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা

মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলে মস্তিষ্ক উদ্দীপনা হারায়, যা বিষণ্নতা ও স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ায়।

সমাধান: বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলুন, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিন।

উচ্চ শব্দে গান শোনা

হেডফোনে উচ্চ শব্দে গান শোনার ফলে কানের শ্রবণ কোষ নষ্ট হয়। এটি শুধু কানে নয়, মস্তিষ্কের শ্রবণ প্রক্রিয়াকেও দুর্বল করে, যা স্মৃতি ও মনোযোগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সমাধান: ৬০/৬০ নিয়ম অনুসরণ করুন—৬০ শতাংশ ভলিউমে একটানা ৬০ মিনিটের বেশি না শোনার চেষ্টা করুন।

মানসিক উদ্দীপনার অভাব

নতুন কিছু শেখা বা মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ না দিলে স্নায়ুর সংযোগ দুর্বল হয়। এর ফলে সমস্যা সমাধান ও চিন্তার গতি কমে যায়।

সমাধান: বই পড়ুন, ধাঁধাঁ বা পাজল সমাধান করুন, নতুন ভাষা বা দক্ষতা শেখার চেষ্টা করুন।

পর্যাপ্ত পানি না পান করা

মস্তিষ্কের প্রায় ৭৫% অংশ পানি নিয়ে গঠিত। সামান্য পানিশূন্যতাও মাথাব্যথা, মনোযোগের ঘাটতি ও ক্লান্তি বাড়ায়।

সমাধান: প্রতিদিন নিয়মিত পানি পান করুন, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায়।

ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম

মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা ঘুমের মান নষ্ট করে।

সমাধান: ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন বন্ধ রাখুন এবং বই পড়া বা হালকা সঙ্গীত শোনার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

শেষ কথা 

মস্তিষ্ক আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। ছোট ছোট পরিবর্তন—যেমন সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক উদ্দীপনা—দীর্ঘদিন মস্তিষ্ককে সক্রিয় ও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। আজ থেকেই ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করে পরিবর্তন আনুন, কারণ আপনার মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়া মানে আপনার ভবিষ্যতের যত্ন নেওয়া।

এম আর এম – ০৮৩৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button