বাংলাদেশ

শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিপেটা, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার

রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়।

আন্দোলনের কারণ

আজ সোমবার বেলা ১টার দিকে প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেডের শ্রমিকরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। তাঁদের দাবি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ দ্রুত কার্যকর করতে হবে। গতকাল রোববারও একই দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভ করেছিলেন। এরপর কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই কারখানার দুটি ইউনিট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয় এবং তারা আবারও শাহবাগে বিক্ষোভ শুরু করেন।

সংঘর্ষের ঘটনা

বিক্ষোভের সময় আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ এসে তাঁদের উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ প্রথমে লাঠিপেটা করে, পরে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

আন্দোলনকারীদের দাবি

আন্দোলনকারীরা জানান, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে প্রহসন চলছে। ২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ এবং ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২১ এপ্রিল। এরপর ১২ জুন ভাইভা সম্পন্ন হয়।

হাইকোর্টের রায়

আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ৩১ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। কিন্তু সুপারিশপ্রাপ্ত না হওয়া ৩১ জন হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়।

সামাজিক প্রভাব

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনকারীরা জানান, সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও যোগদান করতে না পেরে ৬ হাজার ৫৩১টি পরিবার সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে। তাঁরা মানসিক বিপর্যয় ও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আন্দোলনকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন, “এখন তাঁদের থাকার কথা নিজ নিজ কর্মস্থলে, অথচ তাঁরা রাস্তায়। তাঁদের জীবনের দায়ভার কে নেবে?”

শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা ও জলকামান ব্যবহারের ঘটনা একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button