বাংলাদেশ

জমির ১০ ধরনের নামজারি বাতিল হচ্ছে এ মাসের মধ্যেই!

Advertisement

দেশের ভূমি প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চলেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। আগামী বছর থেকে দেশের সব জেলায় ডিজিটাল নামজারি ব্যবস্থা চালু করা হবে। তাই ২০২৫ সালকে ভূমি প্রশাসনে বড় পরিবর্তনের বছর হিসেবে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন নীতিমালায় ১০ ধরনের জমির নামজারি (মিউটেশন) আর কার্যকর থাকবে না, অনেক ক্ষেত্রেই নামজারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। বিশেষ করে জাল দলিল, ভুল দাগ নম্বর, ঘুষ এবং সরকারি খাস জমি ব্যক্তির নামে নামজারি করাসহ অন্যান্য অনিয়ম বন্ধ করতে ভূমি প্রশাসন এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নতুন নীতির ফলে দেশজুড়ে জমির মালিকানা যাচাই, রেকর্ড সংশোধন এবং খতিয়ান আপডেটে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে।

ভূমি প্রশাসনে কঠোর সিদ্ধান্ত কেন?

দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ভূমি প্রশাসনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠছিল। ভূমি প্রশাসন কাঠোর এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার কারণ হলো:

  • জালিয়াতি বন্ধ: জাল দলিল, ভুল দাগ নম্বর ব্যবহার এবং ঘুষ দিয়ে নামজারি করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল।
  • অনিয়ম রোধ: দখলে না থাকা ভূমি নিজের নামে তোলা এবং সরকারি ও সংস্থার জমি ব্যক্তির নামে নামজারি করার মতো গুরুতর অনিয়ম বন্ধ করা।
  • স্বচ্ছতা নিশ্চিত: নতুন নীতির ফলে অস্বচ্ছ, জালিয়াতি বা আইনি জটিলতায় থাকা জমির নামজারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে। এর ফলে জমির মালিকদের আগে থেকেই সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন হবে।

নতুন এই পরিবর্তনগুলো ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যে ১০ ধরনের জমির নামজারি বাতিল হচ্ছে

ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিম্নোক্ত ১০ ধরনের জমির নামজারি ২০২৫ সালের মধ্যেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে বা বাতিল করা হবে:

 ১. চলমান দেওয়ানি মামলার জমি

জমি নিয়ে দেওয়ানি মামলা চলমান থাকা অবস্থায় যদি কোনো পক্ষ ঘুষ বা প্রভাব খাটিয়ে নিজের নামে নামজারি করে নেন, তাহলে সেই নামজারি বাতিল হবে। মামলার অপর পক্ষ এসিল্যান্ড অফিসে “মিস কেস” করলেই নামজারি শূন্য ঘোষণা হয়ে যাবে।

 ২. দখলে না থাকলেও নামজারি করা জমি

যে জমির প্রকৃত দখল অন্য কারও কাছে, কিন্তু মালিকানা স্বত্বের ভিত্তিতে নামজারি করা হয়েছে, এই ধরনের নামজারি টিকে থাকবে না। দখলে থাকা ব্যক্তি আপত্তি দিলে সংশ্লিষ্ট নামজারি বাতিল হবে।

 ৩. অংশের চেয়ে বেশি জমি নামজারি

কোনো ব্যক্তির মালিকানায় যদি ৩ শতাংশ জমি থাকে, কিন্তু তিনি প্রতারণা করে ৫ শতাংশ নামজারি নেন, তাহলে এই অতিরিক্ত ২ শতাংশ অংশের নামজারি বাতিল হবে।

 ৪. ভুল দাগ নম্বর দিয়ে নামজারি

দলিলে ভুল দাগ নম্বর থাকা সত্ত্বেও ঘুষ দিয়ে নামজারি করালে তা আর বহাল থাকবে না। দলিলের ভুল সংশোধন না করলে এই ধরনের নামজারি ২০২৫ সালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যেতে পারে।

 ৫. অর্পিত সম্পত্তি (ক-তফসিল)

অর্পিত সম্পত্তির (Khas/Enemy Property) মধ্যে ক-তফসিলভুক্ত জমি হলো সরকারি সম্পত্তি। এই সম্পত্তি কোনোভাবেই ব্যক্তিগত নামে নামজারি করা যাবে না। ভুলভাবে নামজারি হয়ে থাকলেও তা বাতিল করা হবে।

 ৬. খাস জমি

খাস জমি (১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত), যা ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৮৬–৯২ ধারায় সরকারের মালিকানাধীন, তা কোনো নাগরিকের নামে নামজারি করা যাবে না। ভুলবশত নামজারি থাকলে সেটিও বাতিল হবে।

 ৭. সরকারি সংস্থার জমি

রেলওয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক বিভাগ বা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি—সবই নামজারি নিষিদ্ধ। ভুলভাবে এই ধরনের সম্পত্তি নামজারি হয়ে থাকলেও তা বাতিল হয়ে যাবে।

 ৮. রেকর্ডবিহীন জমি

সর্বশেষ রেকর্ড (RS/BS/CS/DCR) না থাকা জমি কোনোভাবেই নামজারি করা যাবে না। রেকর্ডবিহীন জমির পূর্বে করা নামজারিও বাতিল হবে

 ৯. অনলাইন তালিকাভুক্ত নিষিদ্ধ সম্পত্তি

অনলাইনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিষিদ্ধ সম্পত্তির তালিকায় (সংস্থা/খাস/অর্পিত) তালিকাভুক্ত জমি নামজারি করলে তা তৎক্ষণাৎ বাতিল হবে।

১০. প্রতারণা, জালিয়াতি বা ঘুষে করা যেকোনো নামজারি

প্রতারণা, জালিয়াতি বা ঘুষ দিয়ে তহসিল অফিসার বা এসিল্যান্ডকে প্রভাবিত করে করা সব নামজারি একে একে বাতিল করা হবে।

নামজারি বাতিল হলে কী হবে?

জমির মালিকদের জন্য এই বাতিল প্রক্রিয়া বেশ কিছু গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে:

  • মালিকানা বিরোধ: জমির মালিকানা নিয়ে পুনরায় আইনি বিরোধ তৈরি হবে।
  • খাজনা বন্ধ: সংশ্লিষ্ট জমির খাজনা দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
  • হস্তান্তর জটিলতা: জমি বিক্রি বা হস্তান্তর আটকে যাবে।
  • রেকর্ড সংশোধন: ভবিষ্যৎ রেকর্ড সংশোধনে বড় ধরনের ঝামেলা হবে।

নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায়

ভূমি প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তনের এই সময়ে সাধারণ জমি ক্রেতা ও মালিকদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সংশ্লিষ্টরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:

  • দলিল যাচাই: দলিলের দাগ নম্বর, পরিমাণ ও মৌজা যাচাই করুন।
  • দখল নিশ্চিতকরণ: দখল নিশ্চিত করে তবেই নামজারি করুন।
  • নিষিদ্ধ জমি: খাস বা সংস্থার জমি কিনবেন না
  • অনলাইন চেক: অনলাইন ভূমি তথ্য সিস্টেমে দাগ নম্বর দিয়ে জমির স্ট্যাটাস চেক করুন।
  • দলিল সংশোধন: দলিলের ভুল থাকলে অবিলম্বে সংশোধন করুন
  • আইনি পদক্ষেপ: প্রয়োজনে এসিল্যান্ড অফিসে আপত্তি/মিস কেস করুন।

ডিজিটাল ভূমি প্রশাসনের পথে বাংলাদেশ

জমির ১০ ধরনের নামজারি বাতিল করার এই সিদ্ধান্ত দেশের ভূমি প্রশাসনে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও অনিয়ম রোধে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রকাশ। ২০২৫ সালের মধ্যে এই পরিবর্তন কার্যকর হলে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ও স্বচ্ছ হবে। তবে জমির মালিকদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে আইনগত জটিলতা বা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হতে হয়।

এম আর এম – ২৫৩৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button