বাংলাদেশ

কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে: কৃষি উপদেষ্টা

Advertisement

কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশে কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে, এর ফলে কৃষক এবং ভোক্তাদের উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে একটা চক্র আছে। এই চক্রকে খুঁজে বের করতে হবে।’ রোববার (৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে কৃষি বিষয়ক সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বাজারের এই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার আজ (৭ ডিসেম্বর) থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। উপদেষ্টার হুঁশিয়ারি, বাজারে দামের ক্ষেত্রে ‘যোগসাজশ থাকলে কৃষি কর্মকর্তাদের চাকরি থাকবে না’

দাম বৃদ্ধির কারণ: অসাধু চক্রের কারসাজি

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে কৃষি উপদেষ্টা বাজারের অসাধু চক্রের হাতকে দায়ী করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়ানো হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন:

“অনেকে আমদানির জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল। বাজারে পেঁয়াজ আছে, কিন্তু কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়েছে।”

এই কারসাজির ফলে কৃষক তাঁর পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আবার ভোক্তাকে উচ্চ দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। তিনি এই চক্রকে খুঁজে বের করার এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকায় পৌঁছানোর পরই সরকার এই বিষয়ে কঠোর হতে বাধ্য হয়েছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির সিদ্ধান্ত ও সীমা

পেঁয়াজের বাজার সহনীয় পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে সরকার আমদানি শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্যের বিস্তারিত জানানো হয়।

  • আমদানির শুরু: রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
  • দৈনিক আইপি (আমদানি অনুমতি): প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি ইস্যু করা হবে।
  • পরিমাণ: প্রত্যেকটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে।

পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। পেঁয়াজের দাম ৭০ টাকা হলে সবার জন্য ভালো।” তিনি আশা করেন, এই সীমিত আমদানি বাজারে দ্রুত একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কৃষি কর্মকর্তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব

কৃষি উপদেষ্টা পেঁয়াজের দামের ক্ষেত্রে যোগসাজশ বা অনিয়ম দেখলে কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “বাজারে দামের ক্ষেত্রে যোগসাজশ থাকলে কৃষি কর্মকর্তাদের চাকরি থাকবে না।” একইসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “ব্যবসায়ীদের কারসাজি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখবে।” এর অর্থ হলো, কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের সরবরাহ ও উৎপাদন তদারকি করবে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও কারসাজি রোধে কাজ করবে।

তিনি নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ কর্মকর্তাদের রদবদলের উদাহরণ টেনে বলেন, লটারি প্রক্রিয়ায় এসপি ও ওসিদের বদলি করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে কৃষি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের বার্তা দেন তিনি। এই মন্তব্য সরকারি প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের তাগিদ দেয়।

সবজির বাজার ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষা

পেঁয়াজের পাশাপাশি সবজির বাজার পরিস্থিতি নিয়েও কৃষি উপদেষ্টা কথা বলেন। তিনি জানান, সবজির দাম এখন সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি যোগ করেন, “দিন যাওয়ার সাথে সাথে আরও কমবে। তবে কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।” অর্থাৎ, বাজার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষকরা যেন তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়, সেই ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এই সময়ে কৃষকরা নতুন ফসল বাজারে আনছেন, তাই তাদের স্বার্থ রক্ষা করাও সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পেঁয়াজের ধারাবাহিক অস্থিরতা

পেঁয়াজের বাজার গত এক মাস ধরেই অস্থির। হঠাৎ করেই দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় পৌঁছানোর পর সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছিল। কিন্তু কৃষকের স্বার্থ রক্ষার্থে তা স্থগিত রাখা হয়েছিল।

কৃষি উপদেষ্টার ঘোষণা ছিল, পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত আছে এবং নতুন পেঁয়াজও শিগগিরই বাজারে চলে আসবে, তাই আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে না। কিন্তু গত দুই দিনে দাম আবারও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ১৫০ টাকায় পৌঁছালে সরকার আমদানির অনুমতি দিতে বাধ্য হলো।

অসাধু চক্র দমনে সরকারের অবস্থান

কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, সরকার পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতির পেছনে অসাধু চক্রের কারসাজির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সীমিত আকারে আমদানির অনুমতি এবং কৃষি কর্মকর্তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি সেই কারসাজি দমনেরই ইঙ্গিত দেয়। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দ্রুত এই চক্রকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং পেঁয়াজের দামকে ৭০ টাকার মতো একটি সহনীয় পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে হবে।

এম আর এম – ২৫২৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button