আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি পূর্ণ মাত্রায় থাকলেও, তফশিল ঘোষণার তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের এক কর্মশালায় তিনি এই তথ্য জানান। ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন আয়োজনে কমিশন পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। তবে তিনি নির্বাচন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। ইসি সচিবের এই বক্তব্য দেশে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে চলমান জল্পনা-কল্পনার মধ্যে একটি স্পষ্টতা নিয়ে এসেছে।
তফসিল ঘোষণা: ইসির সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াধীন
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা জানানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার একটি খসড়া পরিকল্পনা ছিল ইসির। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনও এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ইসি সচিব আখতার আহমেদ আজ নিশ্চিত করেন:
“নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত তফশিল ঘোষণার দিন নির্ধারণ করতে পারে নাই।”
তিনি বলেন, নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শনিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কমিশনের জাতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনি নিজেও সকাল সাড়ে ১১টা থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে আয়োজিত মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠক এবং কার্যক্রম প্রমাণ করে যে, ইসি অভ্যন্তরীণভাবে জোর প্রস্তুতি চালাচ্ছে, তবে তফসিল ঘোষণার দিনক্ষণ নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত আলোচনার টেবিলে রয়েছে।
ইসি’র প্রস্তুতি ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সতর্কতা
ইসি সচিব আখতার আহমেদ দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, নির্বাচন আয়োজনে কমিশন পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য ইসি সকল কারিগরি, লজিস্টিক এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।
তবে তিনি নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য গণমাধ্যমকে অনুরোধ জানিয়েছেন:
“আমি সবাইকে অনুরোধ করি, সঠিক তথ্যটা দেন…নিশ্চয়ই নির্বাচনের ব্যাপারে জোর প্রস্তুতি চলছে।”
এই সতর্কতাটি ইঙ্গিত দেয় যে, সামাজিক মাধ্যম বা রাজনৈতিক মহলে নির্বাচনের তারিখ, পদ্ধতি বা প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। ইসি সচিব এই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিহার করে কমিশনের দেওয়া সঠিক তথ্য তুলে ধরার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
ত্রয়োদশ নির্বাচন: সংসদ ও গণভোটের সমন্বয়
এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি কেবল সংসদ নির্বাচনের জন্য নয়, এর সঙ্গে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। একসঙ্গে দুটি ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে।
এর আগে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেছিলেন যে, এবার একসঙ্গে সংসদ ও গণভোট দুটো ভোটের ব্যালটে ভোট দিতে হবে। এর জন্য সময় বেশি লাগবে। এই কারণে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, কোনো ভোটার যেন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। ইসি এই উদ্বেগের বিষয়ে আগামী রোববার (৭ ডিসেম্বর) সিদ্ধান্ত নেবেন বলে বিএনপি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। ইসির এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সাংবাদিকদের কর্মশালা ও আইনের পরিচিতি
ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালায় বক্তব্য দেন। কর্মশালাটি আয়োজন করে ইউএনডিপি ও রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)।
কর্মশালার শিরোনাম ছিল: ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (সর্বশেষ সংশোধনীসহ); সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ (সর্বশেষ সংশোধনীসহ) এবং নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর পরিচিতি’। এই কর্মশালার আয়োজন সাংবাদিকদের নির্বাচনের আইন ও বিধিমালা সম্পর্কে অবগত করা এবং নির্বাচনের তথ্য সঠিকভাবে প্রচারের গুরুত্বকে তুলে ধরে। সকালে এই কর্মশালার আরেক অধিবেশনে নির্বাচন কমিশনার আবদুল রহমানেল মাছউদ সংবিধান, নির্বাচনের গুরুত্ব ও কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
তফসিলের অপেক্ষায় দেশ
ইসি সচিব আখতার আহমেদের এই বক্তব্য নিশ্চিত করেছে যে, নির্বাচন আয়োজনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও তফশিল ঘোষণার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার জন্য আরও কিছু সময় প্রয়োজন। গণভোট সংক্রান্ত জটিলতা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে কমিশন কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের প্রত্যাশা হলো, নির্বাচন কমিশন দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য সময় ঘোষণা করবে এবং কোনো প্রকার বিভ্রান্তি বা জল্পনা ছাড়াই নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
এম আর এম – ২৫১২, Signalbd.com



