সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়া রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) হিসেবে নিরাপত্তা সুবিধা কেবল তাঁর জন্যই প্রযোজ্য। এই সুবিধা তাঁর পরিবার বা অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত গেজেট জারি হওয়ার পর থেকেই জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যদের ভিভিআইপি সুবিধা প্রাপ্তি নিয়ে নানা মহলে গুঞ্জন চলছিল। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টার মন্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি খোলাসা হলো। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিলেও, আইনের কাঠামোর বাইরে গিয়ে সুবিধা দিতে রাজি নয় বলে নিশ্চিত করল।
ভিভিআইপি সুবিধা: গেজেটের ব্যাখ্যা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানাতে এসে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি দেন। তিনি নিশ্চিত করেন:
- সুবিধা কেবল খালেদা জিয়ার জন্য: বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) হিসেবে সুবিধা কেবল তাঁর জন্যই প্রযোজ্য।
- পরিবারের সদস্যরা নন: এই সুবিধা তাঁর পরিবার বা অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
- আইনি ভিত্তি: এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে গেজেটও জারি করা হয়েছে এবং গেজেট অনুযায়ী শুধু খালেদা জিয়া সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
গত মঙ্গলবার বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১ এর ধারা ২(ক)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণা করা হয় এবং তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় এসএসএফকে। উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বক্তব্য সেই গেজেটের আইনি কাঠামোকেই জোরদার করল।
তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে গুঞ্জন
খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণার পর থেকেই তাঁর ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে এলে তিনিও এসএসএফের নিরাপত্তা পাবেন কিনা, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছিল। তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং সম্প্রতি তাঁর দেশে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
তবে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের স্পষ্ট বক্তব্য সেই জল্পনায় ছেদ টানল। এর অর্থ হলো, তারেক রহমান দেশে ফিরলেও এসএসএফের ভিভিআইপি নিরাপত্তা প্রটোকল তিনি পাবেন না, কারণ তিনি গেজেট অনুযায়ী ভিভিআইপি নন। তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে প্রচলিত অন্যান্য আইনের মাধ্যমে। এর আগে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছিলেন, তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে তাঁর নিরাপত্তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করা হবে। সেই ব্যবস্থা অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার মাধ্যমে করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক ও সরকারি সিদ্ধান্ত
বৃহস্পতিবার সকালে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে। এই বৈঠকে সরকারের বেশ কয়েকটি অধ্যাদেশ পাস ও নীতিগত অনুমোদন করা হয়। বিকেলে বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও আলোচনার বিষয়ে গণমাধ্যমে ব্রিফিং করেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম ও উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। উপ প্রেসসচিব বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।’ এই বৈঠক প্রমাণ করে, সরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সমন্বিতভাবে নীতি নির্ধারণ করছে।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিস্থিতি
খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বার্ধক্যজনিত নানান জটিলতায় তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটময়’ বলে জানিয়েছিলেন।
তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হবে বলে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছেন। ভিভিআইপি ঘোষণার মাধ্যমে সরকার তাঁর জীবন রক্ষার এই প্রক্রিয়াটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়েছে।
রাজনৈতিক ও আইনি বিশ্লেষণ
বেগম খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণা করার সরকারি সিদ্ধান্তটি দেশের প্রধান বিরোধী নেতার প্রতি মানবিকতা ও সম্মান প্রদর্শনের ইঙ্গিত দেয়। তবে তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের এই সুবিধা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের আইনের কাঠামোর প্রতি সম্মান এবং সুযোগের অপব্যবহার রোধের প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসএসএফের সুবিধা রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের মতো নির্দিষ্ট পদাধিকারীদের জন্য সংরক্ষিত। এই সুবিধা অন্য রাজনৈতিক নেতাদের পরিবারকে দিলে অপব্যবহারের সুযোগ বাড়তে পারত। সরকারের এই স্পষ্টতা ভিভিআইপি প্রটোকলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে।
ভিভিআইপি প্রটোকল ও আইনের শাসন
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বক্তব্য ‘খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের অন্য কেউ পাচ্ছেন না ভিভিআইপি সুবিধা’ এই বিষয়টি স্পষ্ট করল। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, সরকার মানবিকতা দেখালেও আইনের শাসন এবং ভিভিআইপি প্রটোকলের কঠোর কাঠামো বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। এসএসএফের নিরাপত্তা সুবিধা কেবল বেগম খালেদা জিয়ার জন্যই প্রযোজ্য হবে। এই স্বচ্ছতা দেশের প্রশাসনে আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এম আর এম – ২৫০৩, Signalbd.com



