বাংলাদেশ

সপ্তাহে তিন দিন চলবে ঢাকা-করাচি ফ্লাইট

Advertisement

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ঢাকা থেকে পাকিস্তানের করাচি পর্যন্ত সপ্তাহে তিনটি সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গতকাল বুধবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই অগ্রগতির বিষয়ে কথা বলেন। দীর্ঘদিন ধরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ নিয়ে যে জল্পনা চলছিল, হাইকমিশনারের এই ঘোষণার মাধ্যমে তার অবসান হলো। এই নতুন ফ্লাইট চালু হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং জনগণের যাতায়াত সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি: তিনটি ফ্লাইট

বাংলাদেশের হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খান গতকাল পাকিস্তানের ফরেন সার্ভিসেস একাডেমিতে বক্তৃতা করেন। এরপর দ্য নিউজের সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি ঢাকা-করাচি ফ্লাইট চালুর অগ্রগতি বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

হাইকমিশনার বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট শুরু করছি। আমাদের জাতীয় বিমান সংস্থা (বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস) করাচিতে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে।’ এই ফ্লাইটগুলো চালু হলে ঢাকা ও করাচির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে, যা ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক হবে। এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যেকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক জোরদারে সহায়ক হবে।

ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার নিয়ে স্পষ্টতা

ঢাকা থেকে করাচি বা অন্যান্য পাকিস্তানি শহরে ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক প্রশ্ন ছিল ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার নিয়ে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, পাকিস্তানের ওপর ভারতের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে ঢাকায় সহসা পাকিস্তানি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা নেই। এই বিষয়ে হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খান স্পষ্টতা এনেছেন।

তিনি বলেন, যেভাবে ভারতীয় উড়োজাহাজ বাংলাদেশি আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারে, একইভাবে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটগুলোও ভারতের আকাশসীমা দিয়ে উড়বে। এই বক্তব্য ইঙ্গিত করে যে, ঢাকা-করাচি রুটে ভারতের আকাশসীমা ব্যবহারের বিষয়ে কূটনৈতিক কোনো বাধা নেই। আঞ্চলিক বিমান যোগাযোগ এবং রুট পরিচালনার ক্ষেত্রে এই পারস্পরিক সুবিধা দুই দেশের মধ্যেকার বিমান চলাচলকে সম্ভব করে তুলছে।

পাকিস্তানের বিমান সংস্থার ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা

যদিও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ঢাকা থেকে করাচিতে ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে পাকিস্তানি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। পাকিস্তানের একটি এয়ারলাইনস এয়ার-সিয়াল ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ফ্লাইট চালুর অনুমোদন পেয়েছে বলে জানা যায়।

তবে পাকিস্তানের ওপর ভারতের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে পাকিস্তানি এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি ঢাকা থেকে করাচি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না। ফলে, তাদের ফ্লাইট চালু করতে হলে দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। এই কারণে আপাতত বাংলাদেশ বিমানই ঢাকা-করাচি রুটে নেতৃত্ব দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

যোগাযোগ ও বাণিজ্যের গুরুত্ব

হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খান ফরেন সার্ভিসেস একাডেমিতে বক্তৃতা দেওয়ার সময় দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য, যোগাযোগ ও পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে বাণিজ্য ও যোগাযোগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে তিনি স্বীকার করেন যে, সীমিত প্রবেশাধিকার, সীমান্তে বিধিনিষেধ এবং আঞ্চলিক রাজনীতি এখনো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে দুই দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং পণ্যের যাতায়াত সহজ হবে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এছাড়াও, এই ফ্লাইট চালু হলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কও জোরদার হবে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ

ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট চালুর অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে:

১. বাণিজ্য বৃদ্ধি: দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ ও দ্রুত হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক এবং পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন পণ্য সহজে পরিবহন করা সম্ভব হবে। ২. সময় ও খরচ সাশ্রয়: যাত্রীদের আর তৃতীয় কোনো দেশ ঘুরে যেতে হবে না, যার ফলে সময় ও ভ্রমণ খরচ উভয়ই সাশ্রয় হবে। ৩. শিক্ষার্থী ও পর্যটন: এই রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে উচ্চশিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য পাকিস্তানে গমনেচ্ছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং পর্যটকদের সুবিধা হবে।

এই উদ্যোগটি দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও কার্যকর এবং ফলপ্রসূ করে তুলবে বলে আশা করা যায়।

বিমান যোগাযোগের নতুন দিগন্ত

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-করাচি রুটে সপ্তাহে তিনটি সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি দুই দেশের যোগাযোগ এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ভারতের আকাশসীমা ব্যবহারের বিষয়ে থাকা কূটনৈতিক জল্পনার অবসান হওয়ায় এই ফ্লাইট চালু এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খানের এই ঘোষণা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এম আর এম – ২৪৯৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button