বাংলাদেশ

সীমান্তে ৩০ বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে বিএসএফ

Advertisement

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্তে বুধবার ভোরে বাংলাদেশি ৩০ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF)। এই ঘটনায় নারী, পুরুষ এবং শিশুরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।

পুশইন কার্যক্রমের বিবরণ

তেঁতুলবাড়িয়া বিওপির হাবিলদার মোহাম্মদ আলী জানান, বিএসএফ পুশইন করা ব্যক্তিদের তেঁতুলবাড়িয়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমানারেখার ১৪০/৬ এস পিলারের প্রায় ১০০ গজ ভেতরে মথুরাপুর মাঠপাড়া এলাকায় ঠেলে পাঠিয়েছে।

হাবিলদার আলীর বরাত দিয়ে জানা গেছে, পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা জীবিকার তাগিদে প্রায় ৫ বছর আগে ভোমরা সীমান্ত পার হয়ে দালালদের মাধ্যমে ভারতের হুগলী ও সাতরাগাছিসহ বিভিন্ন স্থানে কাজ করতেন। কিন্তু চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর, বিএসএফ-এর ১৪৩/হাকিমপুর চেকপোস্ট কর্তৃক তাদের আটক করা হয় এবং এরপর ৩ ডিসেম্বর তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে পাঠানো হয়।

পুশইন হওয়া ৩০ জনের মধ্যে পুরুষ ১৬ জন, নারী ১০ জন এবং শিশু ৪ জন


পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের পরিচিতি

পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন:

  • খুলনা জেলার কয়রা থানা: মৃত আনসার সানার ছেলে আবু দাউদ সানা (৫৩), স্ত্রী সাজেদা খাতুন (৪৮), ছেলে সুমন আজাদ (২৫)
  • তেরখাদা থানা: মৃত মোলাম গাজীর ছেলে শাহিদুল গাজী (৭৪), নাসির গাজী (২০)
  • যশোর জেলার কেশবপুর থানা: মৃত আফতাব আলীর ছেলে শাহাদাত আলী (৬২), মেয়ে সুফিয়া বিবি (৪৬), ছেলে আসি কালে (১৭)
  • সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানা: আব্দুল খালেক ছানার মেয়ে রেশমা পারভীন (৩৫), মরিয়ম খাতুন (১৩), নুর হোসেনের মেয়ে জান্নাতি খাতুন (০৬)
  • পাটকেল ঘাটা থানা: দবির উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে তহিদুর বিশ্বাস (৩৬)
  • সদর থানা, ভারশা গ্রাম: মোকতাদুল হক মোড়লের ছেলে রাহান মোড়ল (২৮)
  • বাগেরহাট জেলার শরণখোলা থানা: নুরুল ইসলামের ছেলে বিল্লাল হোসেন (৪০), শাহ আলম আকনের ছেলে মিজান আকন (৪০), আব্বাস আকনের মেয়ে রহিমা বেগম (২৬), ছেলে হাসান, ইসমাইল হাওলাদারের মেয়ে ছায়রা বেগম (৩৫), কোবির আকনের ছেলে হাসিব (১৪)
  • খুলনা সদর থানা: শহর আলীর ছেলে শরিফুল সানা (২২)
  • কয়রা থানা: মোহসিন আলমের ছেলে মইনুর রহমান (১৮), নজরুল ইসলাম গাজীর ছেলে শাকিল আহমেদ (২৩)
  • যশোরের কেশবপুর থানা: অলিয়ার রহমানের মেয়ে শিউলি বেগম (৩০), মেয়ে আফরিন সুলতানা (১২)
  • শহিদুল সরদারের পরিবার: শিশু কন্যা মারিয়া সুলতানা (০১)
  • অভইনগর থানা: মসিয়ার রহমানের ছেলে আবির (২৫)
  • কোটা পাইড়া থানা: নেছার মোড়লের মেয়ে সকিনা বিবি (৩৬)
  • কয়রা থানা: মামুন গাজীর ছেলে শামীম গাজী (১৫) এবং সালাউদ্দিন গাজী (০৮)
  • ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানা: হাবেজ আলীর মেয়ে রুজিনা আফরিন (২৪)

সীমান্ত পুশইন: একটি প্রায়শই ঘটিত সমস্যা

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে পুশইন বা ফোর্সফুল রিটার্নিং ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় দারিদ্র্য, জীবিকার তাগিদ, এবং সীমান্ত পারাপারের জন্য দালালদের ব্যবহার এই ধরনের ঘটনাকে বৃদ্ধি করে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে এবং পরে সীমান্তের অপর দিক থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। এটি প্রায়শই মানুষিক ও সামাজিক ভয়, পরিবারে বিভ্রান্তি এবং ছোট শিশুদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।

আইনগত প্রক্রিয়া এবং হস্তান্তর

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বনি ইসরাইল বলেন, “পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে। এ সময় প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ ও পরিচয় যাচাই করা হবে।”

ওসি আরও জানান, এই ধরনের ঘটনা সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। তিনি সীমান্তবর্তী মানুষদের নিরাপত্তা ও জীবিকা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।


সীমান্তবর্তী মানুষের জীবন-যাপন

মেহেরপুর, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে মানুষের জীবন সাধারণত সহজ নয়। তারা প্রধানত কৃষি, খামার, দিনমজুরি ও সীমান্ত পারাপার কাজে নির্ভরশীল। সীমান্ত পুশইন বা আটক পরিস্থিতিতে পরিবারে খাবার, চিকিৎসা এবং অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সীমান্তের এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আরও সতর্ক, নিয়মিত এবং মানবিক সমঝোতা দরকার।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং পুশইন

পুশইন মানবাধিকার আইন অনুযায়ী সংবেদনশীল ঘটনা। আন্তর্জাতিক আইন বলছে, সীমান্ত পারাপারের সময় নারী ও শিশুদের সুরক্ষা বিশেষভাবে নিশ্চিত করতে হবে। যদিও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) বিভিন্ন সময়ে নিরাপত্তার স্বার্থে এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তবুও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নারী ও শিশুদের আক্রান্ত হওয়া উদ্বেগজনক।

সারসংক্ষেপ

  • ৩ ডিসেম্বর ভোরে মেহেরপুরের তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্তে ৩০ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করা হয়েছে।
  • পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ১৬, নারী ১০ এবং শিশু ৪ জন
  • তারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে কাজ করতেন এবং ১ ডিসেম্বর BSF-এর চেকপোস্টে আটক হন।
  • স্থানীয় পুলিশ আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে।
  • সীমান্ত পুশইন ঘটনা সীমান্তবর্তী মানুষের জীবিকা ও নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলে।
  • বিশেষজ্ঞরা সীমান্তে মানবিক সমঝোতা এবং পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন।

MAH – 14116 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button