বাংলাদেশ

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে তিন বাহিনীর প্রধান

Advertisement

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থতার খোঁজখবর নিতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছেন তিন বাহিনীর প্রধানরা। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত ৯টা নাগাদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা হাসপাতালে যান। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন বাহিনীর প্রধানদের এই সম্মিলিত পরিদর্শন রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা সঙ্কটপন্ন হলেও তিনি ‘চিকিৎসায় রেসপন্স’ করছেন।

তিন বাহিনী প্রধানের পরিদর্শন ও খোঁজখবর

মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধানরা সম্মিলিতভাবে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। যারা বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে উপস্থিত হন, তাঁরা হলেন:

  • সেনাবাহিনী প্রধান: জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান
  • নৌবাহিনী প্রধান: অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান
  • বিমানবাহিনী প্রধান: এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন

আইএসপিআর সূত্রে এই উচ্চ পর্যায়ের পরিদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তিন বাহিনীর প্রধানরা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। এই পরিদর্শন দেশের সামরিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকের প্রতি সম্মান ও উদ্বেগের প্রতীক। এই পদক্ষেপ দেশের সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্বের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি: চিকিৎসায় রেসপন্স

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের কাছে নেত্রীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা বেশ সঙ্কটাপন্ন। তবে চিকিৎসকদের জন্য আশার খবর হলো, তিনি ‘চিকিৎসায় রেসপন্স’ করছেন। চিকিৎসকদের একটি সূত্র বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে, ডাকলে খালেদা জিয়া মাঝে মধ্যে সাড়া দিতে শুরু করেছেন। চিকিৎসকরা এই পরিস্থিতিকে গত তিন দিনের চেয়ে আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন।

ডা. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, চিকিৎসকরা তাঁকে যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেটি তিনি গ্রহণ করতে পারছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলেও, নতুন করে কোনো অবনতি হয়নি। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এবং সবার সহযোগিতা ও দোয়ার কারণে হয়তো এবার আমরা তাকে আমাদের মাঝে ফিরে পাবো।’

বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত ও বোর্ডের পরামর্শ

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শই চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম জিয়াকে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ ছাড়া বিদেশে নেওয়ার সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘বিদেশে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি আছে কি না মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাজ্য থেকে এসে বিশেষজ্ঞরা তাঁকে দেখবেন। দেখার পরে উনাকে যদি বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন হয় বা বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় আছেন বলে মনে করেন, তখন উনাকে বিদেশে নেওয়া হবে।’ ডা. জাহিদ নিশ্চিত করেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। সর্বোচ্চটা মনে রাখতে হবে রোগীর বর্তমান অবস্থা এবং মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ এই মুহূর্তে আমাদের নেই।’ সরকারের পক্ষ থেকেও বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

ভিআইপি ঘোষণা ও আন্তর্জাতিক সহায়তা

বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে সরকারের পক্ষ থেকে গত সোমবার ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাঁর চিকিৎসার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

এছাড়াও, তাঁর চিকিৎসার জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের আগমন ঘটছে। সোমবার বিদেশি চিকিৎসকদের একটি দল ঢাকায় আসে এবং মঙ্গলবার রাতে চীনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নতুন দল এবং বুধবার যুক্তরাজ্যের মেডিকেল টিমও ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এই আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত পরামর্শই তাঁর চিকিৎসার পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে।

বিএনপির কর্মসূচি স্থগিত ও দোয়া প্রার্থনা

দলীয় প্রধানের গুরুতর অসুস্থতার কারণে বিএনপি তাদের বিজয় দিবস উপলক্ষে পহেলা ডিসেম্বর থেকে পনেরই ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘মশাল রোড শো’সহ বিজয় দিবসের সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকে মিসেস জিয়ার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

দলীয় কর্মসূচি স্থগিত করার এই সিদ্ধান্ত নেতাকর্মীদের মনোযোগ সম্পূর্ণভাবে নেত্রীর সুস্থতার দিকে রাখার জন্য নেওয়া হয়েছে। মি. রিজভী বলেছেন, উনার শারীরিক অবস্থা অবনতিশীল হয়নি, তাই বলে খুব একটা উন্নতি হয়েছে এরকমও খবর পাইনি। অর্থাৎ, তাঁর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।

সামরিক নেতৃত্বের সংবেদনশীলতা ও আশার আলো

তিন বাহিনীর প্রধানদের হাসপাতালে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজখবর নেওয়া দেশের সামরিক নেতৃত্বের সংবেদনশীলতামানবিক দিকটিকে তুলে ধরে। এটি প্রমাণ করে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তাঁর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, চিকিৎসায় তাঁর ‘রেসপন্স’ করার খবরটি দল ও দেশবাসীর মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শের ভিত্তিতে মেডিকেল বোর্ড বিদেশে নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালে এই অপেক্ষার অবসান ঘটবে।

এম আর এম – ২৪৬৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button