বাংলাদেশ

তারেক রহমান এখনও ট্রাভেল পাস চাননি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, ‘উনি চাইলেই ইস্যু হবে’

Advertisement

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার জন্য এখন পর্যন্ত ‘ট্রাভেল পাস’ আবেদন করেননি বলে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই তথ্য জানান। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান চাইলেই পাস ইস্যু হবে, কিন্তু তাঁর জানা মতে এখনও কোনো আবেদন জমা পড়েনি। তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপি’র পক্ষ থেকে ‘শিগগিরই’ আসার ঘোষণার পরই সরকারের পক্ষ থেকে এমন তথ্য এলো। এই তথ্য তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে চলমান জল্পনার মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ট্রাভেল পাসের আবেদন ও সরকারের অবস্থান

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে তাঁর দেশে ফেরার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যদি ট্রাভেল পাসের প্রয়োজন হয়, তবে সরকার তা দ্রুত ইস্যু করতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, ‘উনি (তারেক রহমান) চাইলেই ইস্যু হবে। তবে আমার জানা মতে এখনও তিনি চাননি।’ ট্রাভেল পাস সাধারণত তখনই ইস্যু করা হয় যখন কোনো নাগরিকের পাসপোর্ট মেয়াদোত্তীর্ণ বা অনুপস্থিত থাকে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তারেক রহমানের পাসপোর্ট আছে কিনা, এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘উনার পাসপোর্ট আছে কি না এটা আমি বলতে পারব না।’ তবে সরকারের এই অবস্থান স্পষ্ট করে যে, তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে সরকার প্রশাসনিক বাধা দেবে না।

এক দিনের মধ্যে পাস ইস্যুর প্রতিশ্রুতি

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এর আগেও তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। গত ৩০ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে তিনি বলেছিলেন, তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে কোনো বাধা নেই। যদি তাঁর পাসপোর্ট মেয়াদোত্তীর্ণ বা অনুপস্থিত থাকে, তবে এক দিনের মধ্যে ওয়ান-টাইম ট্রাভেল পাস ইস্যু করা সম্ভব।

তিনি বলেছিলেন, ‘উনি আজ যদি বলেন আসবেন, আমরা কাল পাস দিতে পারি; পরশুদিনই উনি প্লেনে উঠতে পারবেন।’ এই প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করে যে, সরকার তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করতে চায় না। তবে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আবেদন না করায় দেশে ফেরার বিষয়টি এখন সম্পূর্ণরূপে তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক কৌশলের ওপর নির্ভর করছে।

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার প্রস্তুতি

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন একইসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কেও সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থতার জন্য বিদেশে যেতে চাইলে, যা সহযোগিতা দরকার অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সেই সহযোগিতা করা হবে

তিনি উল্লেখ করেন, চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত এবং দলের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের এই আশ্বাসটি মানবিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও একই ধরনের বার্তা দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে সরকার এবং বিএনপির মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য তৈরির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার জল্পনার পূর্বপটভূমি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে জল্পনা শুরু হয় গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর। এই অভ্যুত্থানের কারণে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে থাকা বিভিন্ন মামলায় সাজার রায় বাতিল হয়ে যায়। তাঁর দেশে ফেরার পথ খুলে যাওয়ায় দলের পক্ষ থেকে বারবার তাঁর প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল।

সম্প্রতি তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতা এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দেশে ফেরার আলোচনা আরও তীব্র হয়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল (১ ডিসেম্বর) রাতে ঘোষণা করেন, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন। সালাহউদ্দিন আহমেদের এই ঘোষণার পরই পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই মন্তব্য এলো।

তারেক রহমানের বার্তা: ‘একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়’

তারেক রহমান নিজে গত ২৯ নভেম্বর তাঁর ফেসবুক পোস্টে দেশে ফেরার পথে ‘বাধা’ থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন:

“আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। রাজনৈতিক বাস্তবতার এই পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়ামাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আজকের মন্তব্য এবং সালাহউদ্দিন আহমেদের ‘শিগগিরই’ ফেরার ঘোষণার পর এখন প্রশ্ন উঠছে, তারেক রহমান তাঁর পোস্টে যে ‘রাজনৈতিক বাস্তবতার’ বাধার কথা উল্লেখ করেছিলেন, তা কি এখনও বিদ্যমান? যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আইনি বা প্রশাসনিক বাধা না থাকে, তবে তারেকের সিদ্ধান্তই তাঁর প্রত্যাবর্তনের সময় নির্ধারণ করবে।

বল এখন তারেক রহমানের কোর্টে

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আইনি বা আমলাতান্ত্রিক বাধা না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সরকারের এই স্পষ্ট এবং ইতিবাচক বার্তা এটাই প্রমাণ করে যে, তারেক রহমান এখন চাইলেই ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশে ফিরতে পারেন। বল এখন সম্পূর্ণরূপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কোর্টে। তাঁর দেশে ফেরা কেবল তাঁর মায়ের সেবা এবং পারিবারিক আকাঙ্ক্ষা পূরণই করবে না, বরং দেশের রাজনীতিতে এক বড় ধরনের গতিশীলতা আনবে। এখন দেখার বিষয়, তিনি কবে ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করেন এবং তাঁর সেই ‘শিগগিরই’ ঘোষণা কখন বাস্তবে রূপ নেয়।

এম আর এম – ২৪৬০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button