ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ব্যাংকের লকারে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে। এ খবর প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)-এর সূত্রে। জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় রাখা দুটি লকার ভাঙা হলে মোট ৮৩২ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারদর অনুযায়ী এর মূল্য প্রায় ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
এ ঘটনাটি সমগ্র দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারণ, ক্ষমতাসীন অবস্থায় জনগণের সামনে যে ‘নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি’ বক্তব্য দিয়ে শেখ হাসিনা বিদায় নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাস্তবে তার সম্পদ ও ব্যাংক লকারে থাকা স্বর্ণের তথ্য তা পুরোপুরি উল্টোদিকে নির্দেশ করছে।
হাসিনার বিদায়বক্তব্য ও বাস্তবতার ফারাক
সরকারে থাকাকালীন শেখ হাসিনা বিভিন্ন জনসভায় বারবার বলতেন, তার কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ বা চাওয়া-পাওয়া নেই। বিদায়ের আগে তিনি শুধু জনগণের সেবা করাটাই নিজের কাজ বলে উল্লেখ করতেন। বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন,
“নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি; দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম।”
কিন্তু সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর তার নাম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাংক লকারে বিপুল সম্পদ রাখা ছিল। এ তথ্য উঠে এসেছে এনবিআরের সিআইসি তদন্তে।
ব্যাংক লকার থেকে উদ্ধারকৃত স্বর্ণ ও উপহার
মঙ্গলবার রাজধানীর দিলকুশা এলাকার অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখায় রাখা দুটি লকার ভাঙার পর ৮৩২ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে। সিআইসির কর্মকর্তা জানান,
- ভল্ট নম্বর ৭৫১ ও ৭৫৩ এ স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে।
- ব্যাংক লকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি ও ব্যক্তিগত উপহারসামগ্রীও পাওয়া গেছে।
সাধারণ নিয়মে সরকারি উপহার রাষ্ট্রের তোষাখানায় জমা রাখতে হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা এগুলো ব্যক্তিগত লকারে রাখার কারণে আইনের লঙ্ঘন ঘটেছে। এর ফলে তার বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়েরের সম্ভাবনা রয়েছে।
সিআইসির আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর লকার জব্দ করা হয়েছিল, কিন্তু শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ায় আইনগত কারণে তা ভাঙা সম্ভব হয়নি। অবশেষে আদালতের অনুমতি নিয়ে লকার ভাঙা সম্ভব হয়েছে।
পূর্ববর্তী ব্যাংক হিসাব ও লকার জব্দ
চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর, রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত সেনা কল্যাণ ভবনের পূবালী ব্যাংক করপোরেট শাখা থেকে শেখ হাসিনার নামে থাকা লকার জব্দ করা হয়।
- লকার নম্বর ১২৮
- দুইটি ব্যাংক হিসাব খুঁজে পাওয়া গেছে:
- একটি এফডিআর হিসাব: ১২ লাখ টাকা
- আরেকটি হিসাব: ৪৪ লাখ টাকা
এই তথ্যও নিশ্চিত করছে যে, ক্ষমতায় থাকাকালীন শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সম্পদ গোপন করার চেষ্টা করেছেন।
সরকারি জমি বরাদ্দ ও দুর্নীতির অভিযোগ
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা সরকারি জমি ব্যক্তিগত স্বার্থে বরাদ্দ নিয়েছেন।
- এই অভিযোগে তার পুত্র শেখ রেহানাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান।
- মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার দিন ধার্য করা হয়েছে ১ ডিসেম্বর ২০২৫।
এ ধরনের অভিযোগ ও মামলা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
দেশ ও জনগণের প্রতিক্রিয়া
জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে। কারণ, ক্ষমতাসীন অবস্থায় শেখ হাসিনা যে সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যবহার করেছিলেন, তা জনগণের কাছে জানানো হয়নি।
বিভিন্ন বিশ্লেষক মনে করেন, এই ঘটনা দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের উন্মোচন। এ ধরনের খবর দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে এবং ভবিষ্যতে শাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন তোলে।
ব্যাংক ও আইনগত দৃষ্টিকোণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ব্যাংক লকারে থাকা সরকারি উপহার ও স্বর্ণালংকার ব্যক্তিগত লকারে রাখার ঘটনা অতিরিক্ত গুরুতর আইনি লঙ্ঘন।
- এটি মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত না হলেও, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও অর্থের শোধহীন ব্যবহারের দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধমূলক।
- এনবিআর এবং সিআইসি তদন্ত করছে, যাতে সমস্ত সম্পদের আইনি হিসাব নিশ্চিত করা যায়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
শেখ হাসিনার এই সম্পদ অনুসন্ধান দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে।
- ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তার ব্যাংক লকারে বিপুল সম্পদ থাকার তথ্য সামনে এসেছে।
- এটি প্রমাণ করে যে, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সরকারি সম্পদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার প্রায়শই ঘটে।
- রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সংবাদ সংক্ষেপ
১. শেখ হাসিনার ব্যাংক লকারে ৮৩২ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার।
২. বাজারদর প্রায় ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
৩. ব্যক্তিগত লকারে সরকারি উপহার রাখা হয়েছে।
৪. পূর্বাচল প্রকল্পে সরকারি জমি বরাদ্দে দুর্নীতি অভিযোগ।
৫. নতুন মামলা ও আদালতের রায় আগামী ১ ডিসেম্বর।
এই ঘটনায় দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক মহল কৌতূহল ও সমালোচনার সঙ্গে জড়িত। এটি দেশের রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
MAH – 13999 I Signalbd.com



