বাংলাদেশ

গণভোটের ব্যালট হবে রঙিন, ৩ মাস ধরে চলবে প্রচারণা

Advertisement

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পদ্ধতি অনুসরণ করেই দেশে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে, তবে ভোটারদের সুবিধার জন্য গণভোটের ব্যালট পেপার হবে ভিন্ন রঙের বা রঙিন কাগজে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ এবং আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) গণভোট অধ্যাদেশ চূড়ান্তভাবে পাশ হওয়া নিয়ে যৌথ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, গণভোটের গ্রহণ পদ্ধতি, ভোটার আসা যাওয়া এবং গণনা সংসদ নির্বাচনের মতোই হবে, কেন্দ্র ও ভোটার একই থাকবে। কিন্তু দুই ধরনের নির্বাচন একসঙ্গে হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে যাতে কোনো দ্বিধা বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়, সেজন্যই গণভোটের ব্যালট হবে রঙিন। এছাড়া, জুলাই সনদের বিষয়গুলো সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে সরকার তিন মাসব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা চালাবে। ইসি সচিব আখতার আহমেদ এটিকে একটি ‘মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, দুটি নির্বাচনের গণনা একইসঙ্গে হবে।

গণভোটের পদ্ধতি ও ব্যালটের বিশেষত্ব

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হলেও পদ্ধতিগত কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

জাতীয় নির্বাচনের অনুকরণ: ড. আসিফ নজরুল নিশ্চিত করেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং, প্রিসাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হবে, তারাই গণভোটের একই দায়িত্ব পালন করবেন। ভোট গ্রহণ পদ্ধতি এবং কেন্দ্র ও ভোটার তালিকাও একই থাকবে।

রঙিন ব্যালটের সিদ্ধান্ত: একইদিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভোটারদের সুবিধার্তে এবং ভুল এড়াতে গণভোটের ব্যালট পেপার ভিন্ন রঙের বা রঙিন কাগজে ছাপা হবে। তবে উভয় নির্বাচনের ভোট গণনা একইসঙ্গে করা হবে।

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা: ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়ে যাবে।

গণভোটের প্রশ্ন ও বিষয়বস্তু

গণভোটে ভোটারদের সামনে কোন প্রশ্ন রাখা হবে এবং কোন কোন বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হবে।

একক প্রশ্ন: আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, গণভোটের প্রশ্ন একটিই থাকবে, যেখানে ভোটারদের ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ অপশনে ভোট দিতে হবে।

জুলাই সনদের মূল বিষয়: গণভোটের প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ অপশনের নিচে কোন কোন ক্ষেত্রে জুলাই সনদের গণভোট চাওয়া হচ্ছে, তা ৪টি বিষয় আকারে উল্লেখ করা থাকবে। এর মাধ্যমে ভোটাররা জুলাই সনদের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

ঐকমত্যের প্রস্তাব: ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জুলাই সনদ স্বাক্ষরকারী দলগুলো এই গণভোট সংক্রান্ত ৩০টি প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

তিন মাসব্যাপী প্রচারণার গুরুত্ব

সরকার কেন এই গণভোটের বিষয়ে জনগণের কাছে দীর্ঘ সময় ধরে প্রচারণা চালাবে।

সচেতনতা বৃদ্ধি: জনগণের মধ্যে গণভোট এবং জুলাই সনদের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সঠিক ধারণা পৌঁছে দিতে সরকার ৩ মাসব্যাপী এই প্রচারণা চালাবে। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও ভোটের গুরুত্ব বুঝতে পারবে।

অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ: প্রচারণার লক্ষ্য থাকবে যেন ভোটাররা সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন এবং ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ এর পক্ষে তাদের যৌক্তিক অবস্থান তৈরি করতে পারেন।

সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষমতা: আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল মন্তব্য করেন, এই সময় নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে কমিশনকে সব ধরণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

পোস্টাল ব্যালট এবং প্রবাসীদের ভোট

পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে কারা ভোট দিতে পারবেন এবং প্রবাসীদের ভোটের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পোস্টাল ব্যালটের নিয়ম: আইন উপদেষ্টা বলেন, আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুযায়ী ৪টি পেশার ব্যক্তিরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। তবে সংবাদকর্মীরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।

দেশে দায়িত্ব পালনকারী: ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, দেশে যারা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন, তারা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।

প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশন: বর্তমানে প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশন চলছে। পরবর্তীতে দেশের অভ্যন্তরে রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে। প্রবাসীদের কাছে সংসদ নির্বাচনের ব্যালট ২টি ইনভেলাপে পাঠানো হবে।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ (কোট): “একইসাথে জাতীয় সংসদের নির্বাচন ও গণভোট হচ্ছে। এটি মাইলফলক। রঙিন কাগজে হবে গণভোটের ব্যালট পেপার। তবে দুইটির গণনা একইসঙ্গে হবে।”

দুটি নির্বাচন একসঙ্গে করার চ্যালেঞ্জ

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একইসঙ্গে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ভোটার বিভ্রান্তি: রঙিন ব্যালট ব্যবহার করা হলেও, দুটি ভিন্ন নির্বাচন একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। প্রচারণার মাধ্যমে এই বিভ্রান্তি দূর করা নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

সাংগঠনিক চাপ: সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস এবং মানবসম্পদকে একইসঙ্গে গণভোটের জন্য ব্যবহার করতে হবে, যা সাংগঠনিক চাপ বাড়াবে।

স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা: দুটি নির্বাচনের প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে এবং তাদের গণনা ও ফলাফল প্রকাশে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা নির্বাচন কমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে। আইন উপদেষ্টার মন্তব্যে কমিশনকে দেওয়া সর্বময় ক্ষমতা সেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

গণতন্ত্রের নতুন দিগন্ত

উপদেষ্টা পরিষদে গণভোট অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন এবং রঙিন ব্যালট পেপার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। একইসঙ্গে সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদের বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া দেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তিন মাসব্যাপী গণপ্রচারণা এবং নির্বাচন কমিশনকে সব ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে সরকার এই প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করতে চাইছে। এখন সব পক্ষকে এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে হবে, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারেন। এই গণভোট ও নির্বাচন দেশের স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদী গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এম আর এম – ২৩৮১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button