আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আজ (২৫ নভেম্বর) বা আগামীকালের (২৬ নভেম্বর) মধ্যেই গণভোট অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অধ্যাদেশ অনুমোদিত হওয়ার পর তিনি এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এবারের নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ভোটারদের সুবিধার্থে দুটি আলাদা রঙের ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হবে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন। তিনি আরও জানান, গণভোট নিয়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ব্যাপক হারে প্রচারণা চালানো হবে। সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি একই সময়ে গণভোট অনুষ্ঠানের এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
গণভোট অধ্যাদেশের অনুমোদন ও প্রকাশের প্রক্রিয়া
প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পরই গণভোট অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
- উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন: মঙ্গলবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণভোট অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়।
- গেজেট প্রকাশের সময়সীমা: ব্রিফিংয়ে ড. আসিফ নজরুল আশা প্রকাশ করে বলেন, অনুমোদনের পর এই অধ্যাদেশটি আজ বা আগামীকালের (২৬ নভেম্বর) মধ্যেই সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে এই অধ্যাদেশটি আইন হিসেবে কার্যকর হবে।
- নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব: আইন উপদেষ্টা জানান, সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং, প্রিসাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হবে, তারাই গণভোটের ক্ষেত্রেও একই দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোটারদের সুবিধার্থে ব্যালট পেপারে বিশেষ ব্যবস্থা
নির্বাচনকালীন সময়ে ভোটারদের যাতে কোনো প্রকার বিভ্রান্তি না হয়, সেজন্য ব্যালট পেপারের রঙ ভিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
- দুই রঙের ব্যালট: এবারের নির্বাচনে দুটি আলাদা রঙের ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য থাকবে সাদা রঙের ব্যালট পেপার এবং গণভোটের জন্য থাকবে রঙিন ব্যালট পেপার।
- বিভ্রান্তি দূরীকরণ: গণভোটের ব্যালট জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট থেকে ভিন্ন রঙের হবে, যাতে ভোটারদের মধ্যে কোনো দ্বিধা বা সংশয় না থাকে এবং তারা সহজেই দুটি নির্বাচনকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারে।
- গণনার পদ্ধতি: আইন উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন, ভোটগ্রহণের পর একই সময়ে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট, দুই ভোটের ফলাফলই গণনা করা হবে।
গণভোটের প্রশ্ন এবং প্রক্রিয়া
নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিতব্য এই গণভোটে ভোটারদের একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়া হবে।
- প্রশ্ন একটি: ড. আসিফ নজরুল জানান, গণভোটে ভোটারদের সামনে একটি প্রশ্ন রাখা হবে। এই প্রশ্নে তাদের ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট দিতে হবে।
- একই সময়ে ভোটগ্রহণ: গণভোট অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের সময়ই। এর ফলে নির্বাচন পরিচালনায় অতিরিক্ত সময় বা জনবলের প্রয়োজন হবে না এবং ভোটারদের একাধিকবার কেন্দ্রে আসার ঝামেলা পোহাতে হবে না।
- প্রচারণার গুরুত্ব: গণভোট নিয়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যাপক হারে প্রচারণা চালানো হবে। এই প্রচারণার মাধ্যমে ভোটারদের গণভোটের গুরুত্ব, প্রশ্ন এবং ভোট প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হবে।
গণভোটের রাজনৈতিক পূর্বপটভূমি
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সাংবিধানিক বিষয়ে জনগণের মতামত নেওয়ার দাবি ছিল।
- সাংবিধানিক পরিবর্তন: গণভোট সাধারণত কোনো বড় সাংবিধানিক বা নীতিগত বিষয়ে জনগণের সরাসরি মতামত জানতে চাওয়ার একটি প্রক্রিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, যে প্রশ্নটি গণভোটে রাখা হবে, তা দেশের শাসন কাঠামো বা পদ্ধতির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
- গণতান্ত্রিক চর্চা: সুষ্ঠু নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটের আয়োজন দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরও বেগবান করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। জনগণের সরাসরি মতামত গ্রহণের এই পদ্ধতি সাংবিধানিক সিদ্ধান্তের ভিত্তি আরও শক্তিশালী করবে।
- ঐতিহাসিক নজির: বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। এবারের গণভোট নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল (কোট): “গণভোটে একটি প্রশ্ন থাকবে। ভোটারদের হ্যাঁ বা না ভোট দিতে হবে। গণভোটের ব্যালট জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট থেকে ভিন্ন রঙের হবে, যাতে ভোটারদের কোনো দ্বিধা না থাকে।”
বিশেষজ্ঞ মতামত ও প্রতিক্রিয়া
আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গণভোটের এই প্রক্রিয়াকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন।
- আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া: সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু সংসদ নির্বাচন স্থগিত রয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে, তাই অধ্যাদেশের মাধ্যমে গণভোটের বিধান কার্যকর করা একটি আইনি প্রক্রিয়াগত ধাপ। তবে গেজেট প্রকাশের পর এই অধ্যাদেশের বিস্তারিত দিকগুলো বিশ্লেষণ করা হবে।
- রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান: ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এখনো গণভোটের প্রশ্নটি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গণতন্ত্রে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকালের মধ্যেই গণভোট অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ হতে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই সময়ে গণভোট অনুষ্ঠানের এই সিদ্ধান্ত দেশের গণতন্ত্রে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবে। আলাদা রঙের ব্যালট পেপার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ভোটারদের বিভ্রান্তি এড়াতে একটি বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ। এখন দেখার বিষয় হলো, গেজেট প্রকাশের পর গণভোটের প্রশ্নটি কী থাকে এবং দেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব কতটুকু পড়ে। এই অধ্যাদেশের সফল বাস্তবায়ন দেশের নির্বাচনী এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে একটি নতুন দিশা দেবে।
এম আর এম – ২৩৭১,Signalbd.com



