যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার সম্পর্ক নতুন সংকটে
যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার কূটনৈতিক সম্পর্ক বহুদিন ধরেই উত্তপ্ত। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ওয়াশিংটন পুয়ের্তো রিকোর সামরিক ঘাঁটিতে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে, যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
এফ-৩৫ মোতায়েনের কারণ কী?
মার্কিন প্রশাসনের দাবি, ভেনেজুয়েলা থেকে সমুদ্রপথে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ কারণেই তারা ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এই মাদক কারবারে জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই চোরাকারবারি নেটওয়ার্ক ধ্বংস করাই মূল লক্ষ্য।
তবে সমালোচকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের আসল উদ্দেশ্য ভেনেজুয়েলার বিশাল তেল সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। কারণ ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রমাণিত তেল মজুত রয়েছে ভেনেজুয়েলায়। ফলে তেল সম্পদ দখলের অভিযোগ নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
মাদুরোর অভিযোগ: “সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র চলছে”
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভেনেজুয়েলা। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ওয়াশিংটন তার সরকারকে জোরপূর্বক উৎখাতের পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন—
“আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শ্রদ্ধা করি। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করছি, ভেনেজুয়েলার সার্বভৌমত্বকে সম্মান করুন। আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। আমি সবসময় আলোচনায় আগ্রহী।”
মাদুরোর দাবি, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা এই সঙ্কট সমাধানে মধ্যস্থতার ভূমিকা নেয়।
ভেনেজুয়েলার নির্বাচন ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
উত্তেজনার আরেকটি বড় কারণ ভেনেজুয়েলার সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিতর্কিত এই নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসেন নিকোলাস মাদুরো। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনের বৈধতা মানতে অস্বীকার করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়নি। ফলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও অবনতি ঘটেছে।
মার্কিন সামরিক উপস্থিতি: নতুন শীতল যুদ্ধের ইঙ্গিত?
মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের ঘটনা শুধু ভেনেজুয়েলাতেই নয়, পুরো লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—
“এটি কেবল মাদকবিরোধী অভিযান নয়, বরং ভূরাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের একটি অংশ।”
কারণ এফ-৩৫ বিশ্বের অন্যতম আধুনিক স্টেলথ যুদ্ধবিমান, যা সাধারণত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মিশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ভেনেজুয়েলার সম্পদ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুতের দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ওই তেল সম্পদের প্রতি আগ্রহী। অতীতে ইরাক ও লিবিয়ার মতো দেশগুলোতেও একই ধরনের সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রেও সেই ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন—
“যখনই কোনো দেশে প্রাচুর্য থাকে, তখনই বিশ্বশক্তিগুলো নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক তৎপরতার মূল লক্ষ্য তেল, মাদক নয়।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রাশিয়া ও চীন স্পষ্টতই ভেনেজুয়েলার পাশে অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়া জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি। অপরদিকে, চীন বলেছে—
“আমরা আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করি। কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া যাবে না।”
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে, যেন তারা সামরিক সংঘাত এড়ানোর উদ্যোগ নেয়।
সম্ভাব্য পরিণতি: যুদ্ধ নাকি সমঝোতা?
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সামরিক অভিযান চালায়, তবে ক্যারিবীয় অঞ্চলে নতুন এক যুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে। এর ফলে বৈশ্বিক তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে।
অন্যদিকে, কূটনৈতিক সমাধানেরও সুযোগ রয়েছে। যদি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় দুই দেশ আলোচনায় বসে, তবে বড় ধরনের সংঘাত এড়ানো সম্ভব।
MAH – 12660, Signalbd.com



