বাংলাদেশ

ঢাকা ছাড়লেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের ঢাকা সফর সমাপ্ত

Advertisement

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে আজ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা ছাড়েন। প্রধান উপদেষ্টা অফিসের প্রেস উইং এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফর ছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের এবং অর্থনৈতিক, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিতরা

প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগেকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম. তৌহিদ হোসেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, এবং পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম

বিদায়ের আগে রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল অনুযায়ী তাকে ‘স্ট্যাটিক গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। এই প্রটোকল মূলত দুই দেশের সৌহার্দ্য ও মর্যাদা প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সফরের মূল আকর্ষণ: সমঝোতা স্মারক ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের ঢাকা সফরে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

  1. স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত MoU:
    উভয় দেশ স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময় বাড়াতে এই সমঝোতায় সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে টেলিমেডিসিন, স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ, এবং দুদেশের হাসপাতালগুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান।
  2. ইন্টারনেট সংযোগ ও ডিজিটাল প্রযুক্তি:
    এই সমঝোতা স্মারক ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল প্রযুক্তি, এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে (ICT) সহযোগিতা আরও দৃঢ় করবে।

এছাড়া শেরিং তোবগে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। আলোচনায় উন্নয়ন, উদ্যোক্তা উদ্যোগ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং সামাজিক উন্নয়ন খাতের সম্প্রসারণ নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়।

সরকারি ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফরে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকগুলোতে দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা, বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পর্যটন এবং স্বাস্থ্য খাতের সহযোগিতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আলোচনা করা হয়।

সরকারি সূত্র জানায়, শেরিং তোবগের সাথে বৈঠকে উন্নয়ন প্রকল্প, বিনিয়োগ সুবিধা এবং ব্যবসায়িক সহযোগিতা নিয়ে বিশেষ আলোকপাত করা হয়েছে।

দুই দেশের সম্পর্ক: ইতিহাস ও প্রাসঙ্গিকতা

ভুটান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক। দুই দেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য ও পর্যটন খাতের মধ্যে বিনিময় বাড়াতে ধারাবাহিক উদ্যোগ নিয়েছে।

  • পর্যটন খাতে সহযোগিতা:
    বাংলাদেশের পর্যটক ভুটানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আগ্রহী। উভয় দেশের পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ভুটান-বাংলাদেশ পর্যটন সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
  • বাণিজ্য ও ব্যবসায়:
    ভুটান থেকে চা, স্ফটিক, কাঠ ও হস্তশিল্প সামগ্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশ থেকে ভুটানে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও প্রস্তুত পণ্য রপ্তানি হয়।
  • শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত:
    ভুটানের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতে চায়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি বিনিময় এবং প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বিশেষ মন্তব্য

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম. তৌহিদ হোসেন জানান, “ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের এই সফর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা যুগোপযোগী সহযোগিতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছি।’’

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বাংলাদেশ সফরের সময় বলেছিলেন, “বাংলাদেশ আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ। আমরা উভয় দেশের মধ্যে প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চাই।’’

সফরের প্রভাব

বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর:

  • দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করবে।
  • স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
  • ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের রাষ্ট্রীয় সফর দুই দেশের জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও পারস্পরিক বোঝাপড়া গড়ে তোলে।

আগামীর সম্ভাবনা

ভুটান ও বাংলাদেশ উভয়ই পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণে গুরুত্বারোপ করছে। ফলে আগামী দিনে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সবুজ প্রযুক্তিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা বাড়ছে।

সফরের পর, দুই দেশের মন্ত্রক ও সরকারি সংস্থা সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। এতে বাণিজ্য, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি খাতের নতুন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের ঢাকা সফর একটি সফল রাষ্ট্রীয় সফর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও বাণিজ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়া বাংলাদেশের জন্য উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে

এই সফর দুদেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে এবং আগামী দিনে উভয় দেশের জনগণ ও অর্থনীতি উভয়েই লাভবান হবে

MAH – 13961 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button