নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাঁর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে তিনি রওনা হন এবং রাত ৮টা ১০ মিনিটের কিছু আগে হাসপাতালটিতে প্রবেশ করেন।
দলীয় সূত্র ও তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন যে, এটি রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর চিকিৎসকেরা পরবর্তী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সিদ্ধান্ত নেবেন।
হাসপাতালে ভর্তির কারণ ও প্রক্রিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য।
ভর্তির উদ্দেশ্য: তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল মামুন নিশ্চিত করেছেন, বেশ কিছু স্বাস্থ্য বিষয়ক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এটি তাঁর শারীরিক অবস্থার নিয়মিত পর্যবেক্ষণের অংশ।
ভর্তির সময়: রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি ‘ফিরোজা’ থেকে রওনা দেন এবং রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান।
বর্তমান অবস্থা: সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। পরীক্ষার পর মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মেডিকেল বোর্ড ও চিকিৎসা পরিস্থিতি
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চলছে, যা তাঁর স্বাস্থ্যের জটিলতা বিবেচনা করে গঠিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ বোর্ড: তিনি দীর্ঘদিন ধরে যে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন, সেই বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ীই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই বোর্ডের সদস্যরা তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন।
রোগের জটিলতা: বিএনপি চেয়ারপারসন দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ফুসফুসের জটিলতা, লিভারের সিরোসিস, ডায়াবেটিস এবং আর্থ্রাইটিস সহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। তাঁর এই সম্মিলিত শারীরিক জটিলতাগুলোর জন্য নিয়মিত নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা: হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁর শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার পরীক্ষা করা হবে। বিশেষ করে, লিভার এবং হার্টের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করা হবে বলে জানা গেছে।
পূর্ববর্তী চিকিৎসা ও বিদেশ সফর
বেগম খালেদা জিয়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশ ও বিদেশে একাধিকবার চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত পূর্ববর্তী পদক্ষেপগুলি ছিল উল্লেখযোগ্য।
সর্বশেষ হাসপাতাল ভর্তি: গত ১৫ অক্টোবর সর্বশেষ তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা বাসায় থেকেই চলছিল।
লন্ডন সফর: এর আগে, উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান। সেখানে ১১৭ দিন অবস্থান শেষে গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। বিদেশে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর থেকে তিনি নিয়মিত চেক-আপের মধ্যে আছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের প্রধান হওয়ায় তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সব সময়ই ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্বেগ থাকে।
দলীয় উদ্বেগ: বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাঁর হাসপাতালে ভর্তির খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা দ্রুত তাঁর সুস্থতা কামনা করে বিবৃতি দিয়েছেন এবং দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে অংশগ্রহণ: সর্বশেষ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ীই তিনি ঐ অনুষ্ঠানে যোগ দেন বলে তাঁর প্রেস উইংয়ের সদস্যরা জানিয়েছিলেন। এই ঘটনার মাত্র দুই দিনের মাথায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হওয়ায় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি বা সুস্থতার খবর দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল মামুন: “কিছুটা স্বাস্থ্য জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে মূলত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার জন্যই এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। মেডিকেল বোর্ড সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।”
বিশেষজ্ঞ মতামত ও করণীয়
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, খালেদা জিয়ার মতো বহু রোগে আক্রান্ত প্রবীণ রাজনৈতিক নেতার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
প্রবীণ বয়সজনিত ঝুঁকি: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাঁর বয়স বিবেচনায় শরীরের কোনো অবস্থাকেই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে যেকোনো জটিলতা দ্রুত নির্ণয় ও তার চিকিৎসা শুরু করা অত্যাবশ্যক।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা: তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ বোর্ডকে প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
সুস্থতা কামনায় দেশবাসী
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও, তাঁর শারীরিক জটিলতার কারণে দেশবাসীর মধ্যে তাঁর সুস্থতা নিয়ে সব সময়ই এক ধরনের উদ্বেগ বজায় থাকে। তাঁর এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রুটিন প্রক্রিয়া হলেও, এটি তাঁর স্বাস্থ্যের প্রতি সর্বোচ্চ মনোযোগ এবং যত্নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে একজন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছে দেশের আপামর জনসাধারণ। মেডিকেল বোর্ড তাঁর পরীক্ষার পর কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং তিনি কতদিন হাসপাতালে অবস্থান করেন, তা জানতে সবার দৃষ্টি এখন এভারকেয়ার হাসপাতালের দিকে।
এম আর এম – ২৩৫০,Signalbd.com



