আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে ভোটগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি নিশ্চিত করেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি একদিনে গণভোট আয়োজন নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি অতিরিক্ত দায়িত্ব হলেও সামগ্রিক প্রস্তুতি সুষ্ঠুভাবে এগোচ্ছে।
রবিবার (২৩ নভেম্বর) কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি বোচওয়ে বাংলাদেশ সফরকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের নির্বাচন প্রস্তুতির এই অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলকে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
কমনওয়েলথ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক ও ইসির অগ্রগতি
কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি বোচওয়ের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকটি ছিল নির্বাচন প্রস্তুতির অগ্রগতি তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
বৈঠকের সারসংক্ষেপ: ইসি সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কমনওয়েলথ মহাসচিবের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের আসন্ন নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ক বিভিন্ন অগ্রগতি এবং নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়।
প্রস্তুতি নিশ্চিতকরণ: বৈঠকে কমিশন প্রতিনিধি দলকে জানায় যে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য ভোটগ্রহণের সকল সামগ্রী ইতিমধ্যেই প্রস্তুত রয়েছে।
প্রতিনিধি দলের আশাবাদ: বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতিনিধি দল সার্বিক ব্যবস্থা এবং কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত হয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এই বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কমিশন সফল হবে।
ভোটিং প্রক্রিয়ায় নতুন উদ্যোগ ও অন্তর্ভুক্তি
নির্বাচন কমিশন এবার দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রায় ১০ লাখের বেশি ভোটারকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেবে।
বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের ভোট (OCV): প্রথমবারের মতো বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য ভোটদান প্রক্রিয়া (Out of Country Voting – OCV) এগিয়ে চলছে। ইসি এটিকে দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্ভুক্তি হিসেবে দেখছে। এর ফলে প্রবাসীরাও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
পোস্টাল ভোটিং সুবিধা (ICPV): নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ভোটার, আইনি হেফাজতে থাকা ভোটার (যেমন জেলে আটক), নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবীসহ প্রায় ১০ লাখ ভোটারকে ইন-কান্ট্রি পোস্টাল ভোটিং (ICPV) সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে। এই সুবিধা দূরবর্তী ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেবে।
একদিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের চ্যালেঞ্জ
একই দিনে জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট আয়োজন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তবে কমিশন জানিয়েছে তারা প্রস্তুতি নিয়ে আশাবাদী।
অতিরিক্ত দায়িত্ব: ইসি সচিব আখতার আহমেদ স্পষ্ট করে জানান, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি একদিনে গণভোট আয়োজন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য নিঃসন্দেহে একটি অতিরিক্ত দায়িত্ব। এর জন্য বাড়তি ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় প্রয়োজন।
সুষ্ঠু প্রস্তুতির আশ্বাস: তিনি আশ্বাস দেন যে, এই ডাবল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কমিশনের প্রস্তুতি সুষ্ঠুভাবে এগোচ্ছে এবং তারা নির্ধারিত সময়ে তা সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন।
ফেক নিউজ প্রতিরোধ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা
নির্বাচনকে ঘিরে ভুল তথ্য, অপতথ্য ও ফেক নিউজের প্রচার রোধে নির্বাচন কমিশন বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
তথ্য নিয়ন্ত্রণ: কমিশন জানায়, নির্বাচনকে ঘিরে মিসইনফরমেশন, ডিজইনফরমেশন ও ফেক নিউজ প্রতিরোধে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।
গণমাধ্যমে তথ্য সরবরাহ: গণমাধ্যমের মাধ্যমে কমিশন নিয়মিত তথ্য প্রদান করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর লক্ষ্য হলো ভোটারদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং বিভ্রান্তি দূর করা।
অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্য
নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করেছে।
রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা: কমিশন জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ নির্বাচনকে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা দেবে।
পর্যবেক্ষকদের স্বাগত: নির্বাচন কমিশন বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানায় এবং একটি সর্বজনীন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করে তুলবে বলে কমিশন মনে করে।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ: “জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি একদিনে গণভোট আয়োজন নির্বাচন কমিশনের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব হলেও প্রস্তুতি সুষ্ঠুভাবে এগোচ্ছে। ভোটগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে।”
চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশার সমন্বয়
ইসি সচিবের এই ঘোষণা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতির একটি শক্তিশালী ইতিবাচক বার্তা। প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী প্রস্তুত থাকার আশ্বাস ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করবে। তবে একই দিনে দুটি বড় ধরনের ভোট আয়োজনের চ্যালেঞ্জ, শিক্ষক সংকট নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে দেশের নির্বাচনী প্রেক্ষাপটটি জটিল। বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য ভোটদান (OCV) এবং পোস্টাল ভোটিং (ICPV) সুবিধার মতো নতুন উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। এখন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা এবং অবাধ, নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে মনোযোগী হতে হবে।
এম আর এম – ২৩৪৫,Signalbd.com



