বিশ্ব

ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দরে হুতিদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

Advertisement

ইয়েমেনের হোদেইদাহ বন্দরে ইসরায়েলের হামলার পাল্টা জবাবে বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘ফিলিস্তিন-২’ নামের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে হুতি বিদ্রোহীরা। হামলার সময় তীব্র সাইরেন বাজে তেলআবিবজুড়ে।

ইসরায়েলের বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, ইয়েমেন থেকে নিক্ষিপ্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। তবে হামলার সময় তেলআবিবসহ একাধিক অঞ্চলে সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে, সৃষ্টি হয় আতঙ্ক।

ইয়েমেনের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারে এক বিবৃতিতে জানান, ‘ফিলিস্তিন-২’ নামের একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এই হামলা চালানো হয়। তাদের দাবি, ক্ষেপণাস্ত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।

পাল্টা জবাব হিসেবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ

এই হামলার ঘটনা ঘটে ঠিক একদিন পর, যখন ইসরায়েল ইয়েমেনের হোদেইদাহ বিমানবন্দরে বিমান হামলা চালায়। হুতি বিদ্রোহীরা এই হামলাকে “উসকানিমূলক ও আগ্রাসনমূলক” আখ্যা দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।

ইয়েমেনের হুতি বাহিনী বলছে, ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে তারা আরও পাল্টা হামলা চালাবে এবং “ইসরায়েলি আগ্রাসনের শেষ পর্যন্ত জবাব দেয়া হবে”।

ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা প্রস্তুতি

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইয়েমেন থেকে উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্রটি আকাশেই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনায় কোনো হতাহত বা বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো নিশ্চিত হয়নি।

তবে দেশটির বিমানবন্দর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অস্থায়ীভাবে বাতিল বা বিলম্বিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

আগেও ঘটেছে এ ধরনের হামলা

এই প্রথম নয়, গত কয়েক মাসে হুতি বাহিনী একাধিকবার ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর আগে জানুয়ারিতে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল।

হুতিদের দাবি, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের অংশ হিসেবে এসব হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলের গাজায় চালানো আগ্রাসন ও হামলার প্রতিবাদেই তারা এই প্রতিশোধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

আঞ্চলিক উত্তেজনার প্রভাব

মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক এই হামলা-পাল্টা হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। ইয়েমেন, ইরান, লেবাননসহ একাধিক দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হুতিদের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুধুমাত্র ইসরায়েলকে সতর্ক করতেই নয়, বরং অঞ্চলজুড়ে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে। এতে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যপ্রাচ্যনীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ধরনের হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বলেছেন, “ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে এই অঞ্চলে আরও সংঘর্ষ ও অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।”

সামরিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে

সামরিক বিশ্লেষক ড. হামজা সাফিউল্লাহ বলেন, “হুতিদের এই ব্যালিস্টিক হামলা প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী, যা প্রমাণ করে তাদের সামরিক সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এটি ইসরায়েলের জন্য নিরাপত্তাজনিত নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।”

আরেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক জেমস রুবিনের মতে, “বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালানো আসলে শুধু সামরিক নয়, বরং কৌশলগত বার্তা দেয়—ইসরায়েলের ‘সবচেয়ে নিরাপদ’ মনে করা অবকাঠামোও এখন ঝুঁকির মুখে।”

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কোন দিকে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইয়েমেন-ইসরায়েল সংঘর্ষ নতুন মাত্রায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, এই উত্তেজনা পুরো বিশ্বে প্রভাব ফেলতে পারে—বিশেষ করে জ্বালানি বাজার ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে।

ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ প্রতিক্রিয়া, হুতিদের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান—এই তিনটি বিষয়ই পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।

সারসংক্ষেপ  

ইসরায়েলের মতো দেশের প্রধান বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়। হুতিদের সামরিক সক্ষমতা এবং তাদের ঘোষিত প্রতিশোধমূলক নীতি এই অঞ্চলকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই উত্তেজনা কতদূর গড়াবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর সমাধানে কতটা উদ্যোগ নেবে?

এম আর এম – ০৪৭১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button