বাংলাদেশ

দিল্লি পৌঁছেছেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান

Advertisement

কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের সপ্তম নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য এই গুরুত্বপূর্ণ বহুপাক্ষিক বৈঠককে ঘিরে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পৌঁছেছেন। তিনি অংশ নেবেন কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (সিএসসি) নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সপ্তম সম্মেলনে, যা অনুষ্ঠিত হবে আগামী বৃহস্পতিবার। তার সফরকে ঘিরে বাংলাদেশ-ভারতসহ আঞ্চলিক সহযোগিতার বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত: দিল্লিতে পৌঁছে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর ড. খলিলুর রহমান দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান।
এরপর তিনি দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বৃহস্পতিবারের সম্মেলন ঘিরে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন।

সূত্র অনুযায়ী, সফরকালে তিনি ভারতের নিরাপত্তা নীতিনির্ধারকদের সঙ্গেও ভদ্রতাসূচক সাক্ষাৎ করতে পারেন, যদিও এ ধরনের বৈঠকের আনুষ্ঠানিক সময়সূচি এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ কী এবং এর গুরুত্ব

কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোট, যেখানে সদস্য দেশ হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ। জোটের মূল লক্ষ্য হলো সমুদ্র নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, সাইবার নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ।

২০১১ সালে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কনক্লেভটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে।

সপ্তম সম্মেলনকে সামনে রেখে জোটের সদস্যরা আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌথ পরিকল্পনা এবং তথ্য আদান-প্রদানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

সম্মেলনের এজেন্ডা: কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হবে

এই বছরের সম্মেলনে বেশ কয়েকটি প্রাধান্যপ্রাপ্ত ইস্যু আলোচনায় আসার কথা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • সাইবার নিরাপত্তা জোরদার
  • সমুদ্রপথে অপরাধ দমন
  • মানবপাচার ও মাদক চোরাচালান প্রতিরোধ
  • দুর্যোগে আঞ্চলিক সমন্বিত ব্যবস্থা
  • নিরাপত্তা তথ্য বিনিময়ের আধুনিকীকরণ

বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সাইবার নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমনে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধির বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে। ফলে এ ধরনের আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ দেশটির জন্য নীতি-সমন্বয় এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশের অবস্থান ও সম্ভাব্য আলোচনার দিক

বাংলাদেশ নিরাপত্তা সহযোগিতাকে সবসময়ই বহুপাক্ষিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব দেয়। বিশেষত সন্ত্রাসবাদ দমন, উগ্রবাদ প্রতিরোধ, সাইবার হামলা মোকাবিলা ও সীমান্ত নিরাপত্তায় পারস্পরিক সমন্বয়কে বাংলাদেশ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মনে করে।

এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলোতে যৌথ অবস্থান জোরদার করতে চায়:

  • সাইবার হামলা প্রতিরোধে তথ্য-প্রযুক্তি সহযোগিতা
  • বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে সমুদ্র নজরদারি শক্তিশালী করা
  • আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ ও সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলায় অপারেশনাল সহযোগিতা
  • দুর্যোগ-পরবর্তী মানবিক সহায়তা ব্যবস্থায় যৌথ সমন্বয় প্রতিষ্ঠা

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর বাংলাদেশের জন্য আঞ্চলিক নিরাপত্তা অংশীদারিত্বকে আরও দৃঢ় করার সুযোগ তৈরি করবে।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতার ভবিষ্যৎ

দক্ষিণ এশিয়া ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে কৌশলগত পরিবর্তন দ্রুতগতিতে ঘটছে। সামরিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত শক্তির প্রতিযোগিতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা হুমকির ধরন হচ্ছে আরও জটিল। সাইবার হামলা, তথ্যযুদ্ধ, জঙ্গিবাদ, জলদস্যুতা—সব মিলিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সমন্বিত কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

সিএসসি এই প্রেক্ষাপটেই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। জোটের সদস্য দেশগুলো যদি যৌথ মহড়া, তথ্য বিনিময় ব্যবস্থা ও সমুদ্র নজরদারি উন্নয়নে অগ্রগতি ঘটাতে পারে, তবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

ড. খলিলুর রহমানের দিল্লি সফর এবং সিএসসির সপ্তম সম্মেলনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি, সাইবার প্রতিরক্ষা শক্তিশালীকরণ এবং সমুদ্র নিরাপত্তায় যৌথ অবস্থান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সম্মেলন শেষে বিকেলেই তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই বহুপাক্ষিক আলোচনার ফলাফল ভবিষ্যতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোতে কতটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়।

এম আর এম – ২২৯২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button