বাংলাদেশ

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তি কম হওয়ার কারণ জানালো আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল

Advertisement

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার অবদান এবং স্বীকারোক্তি বিবেচনায় শাস্তি হ্রাস করেছে। অন্যদিকে একই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

রায়ের বিস্তারিত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায় ঘোষণা করে। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই রায় প্রদান করে। মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ ছিল:

  • উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান
  • প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূলের নির্দেশ
  • রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে হত্যা
  • রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে হত্যা
  • আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তি হ্রাসের পেছনে মূল কারণ হিসেবে বিচারকরা তার অবদান ও স্বীকারোক্তি উল্লেখ করেছেন। তিনি ট্রাইব্যুনালে নিজেকে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং অভিযোগের স্বীকারোক্তি দেন।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর সাধারণ মেয়াদ ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে চুক্তিভিত্তিকভাবে আরও এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় তিনি পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এবং আদালতে স্বীকার করেছেন যে, আন্দোলনের সকল ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।

মামলায় তাঁর অবদানের স্বীকৃতির কারণে ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ শাস্তির পরিবর্তে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। এটি ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কারও রায়কে ‘রাজসাক্ষী হিসেবে স্বীকারোক্তি’ বিবেচনায় নিয়ে হ্রাস করা উদাহরণ।

শহীদ পরিবার ও জনমত

শহীদ পরিবার ও সাধারণ জনগণ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের রায়ে সন্তুষ্ট নন। শহীদ মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ সাংবাদিকদের জানান, তারা অন্তত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছেন।

শহীদ পরিবারগুলোর মতে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের কার্যকর রায় ও অন্যান্য দোষীদের শাস্তি কার্যকর করা না হলে, দেশের ন্যায়বিচারের উপর প্রশ্ন তুলতে পারে। তারা উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিচারের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া

জুলাই ঐক্য ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। তারা মনে করছেন, মামুনকে রাজসাক্ষী হিসেবে রায় দেওয়া হয় যা অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায্য নয়।

জাতীয় রাজনৈতিক মহলে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, বিচার প্রক্রিয়ায় স্বীকৃত অবদান ও স্বীকারোক্তি থাকা সত্ত্বেও কিছু মামলার শাস্তি কমানো নিয়ে দেশের জনগণ বিভ্রান্ত।

বিশেষজ্ঞ মতামত

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে রায় প্রদানের সময় আসামিদের স্বীকারোক্তি, অবদান এবং সাক্ষ্য প্রমাণ বিবেচনা করে শাস্তি নির্ধারণ করে। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য।

তবে বিশেষজ্ঞরা এটিও মন্তব্য করেছেন যে, শহীদ পরিবার ও সাধারণ জনগণকে সন্তুষ্ট করার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেশের ন্যায়বিচার ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড মানবতাবিরোধী মামলায় রায় প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। বিচারকরা তার অবদান ও স্বীকারোক্তি বিবেচনায় শাস্তি হ্রাস করেছেন। তবে শহীদ পরিবার ও রাজনৈতিক সংগঠনরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নন এবং উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।

এম আর এম – ২২৮১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button