১৭ নভেম্বর, ২০২৫, ঢাকা: ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ও এর আশেপাশের এলাকা একবারে রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আজ সকালে সেখানে দুটি বুলডোজার নিয়ে উপস্থিত হয় একদল তরুণ ও ছাত্র-জনতা, যারা প্রাক্তন স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের দিন এলাকায় সমবেত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুলডোজার দুটির সঙ্গে উপস্থিত তরুণরা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কর্মী। তারা এলাকায় হাঁটাহাঁটি করে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দিতে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে উচ্চারণযোগ্য ছিল:
- “লীগ ধর জেলে ভর”
- “আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না”
- “৩২-এর আস্তানা এই বাংলায় হবে না”
প্রতিবেদকের সাথে সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে ৩২ নম্বরের বাড়িটি নিয়ে আস্থা ও প্রতিশোধের মনোভাব নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছিল। তাঁদের দাবি, বুলডোজার নিয়ে এলাকা ঘিরে জনতার সচেতনতা ও প্রতিরোধের শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল।
বুলডোজার নিয়ে আগের ইতিহাস:
ধানমন্ডি ৩২-এর ইতিহাস রাজনৈতিক কারণে বহুবার আলোচিত হয়েছে। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে, রাত ১১টার দিকে একটি বুলডোজার এসে গুঁড়িয়ে দেয় বাড়িটি। সেই সময় সেখানে একটি এক্সকাভেটরও ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, গত বছরের ৫ আগস্টও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার হাতে বাড়িটি আগুনে পুড়ে যায়। এই ঘটনার পর থেকেই ধানমন্ডি ৩২ রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি ও সতর্কতা:
আজকের পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ায় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জনসাধারণের চলাচল সীমিত হয়েছে এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে।
পুলিশ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। যদিও ছাত্র-জনতার উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে, পুলিশ বলছে যে এখনও পর্যন্ত কোনো গুরুতর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া:
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ধানমন্ডি ৩২-এর ঘটনা শুধু একটি স্থানীয় বিতর্ক নয়, এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও বর্তমান রাজনীতির সংযোগস্থল। বিশেষ করে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা ও তার রায়ের দিন এই বিক্ষোভ আরও তাৎপর্যপূর্ণ।
সাধারণ মানুষও বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনাকে “রাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন অধ্যায়” বলে উল্লেখ করেছেন। আবার কিছু মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই ধরনের সংঘর্ষে জনসাধারণের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
সামাজিক ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি:
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নজর কেড়েছে। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী মামলার রায় ও এর আশেপাশের ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের নজরে এসেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশের প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে বলেছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিক্ষোভের ঐতিহ্য ও প্রভাব:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ধানমন্ডি ৩২-এর মতো কেন্দ্রীয় স্থানগুলো বারবার আলোচিত হয়েছে। ছাত্র আন্দোলন, রাজনৈতিক বিক্ষোভ, এবং সরকারের বিভিন্ন নীতির প্রতিবাদ এই ধরনের স্থানকে দেশের রাজনৈতিক নকশায় গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। বিশেষ করে, ১৯৭৫ সালের পরে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ধরনের বিক্ষোভ রাজনৈতিক প্রভাব ও জনমতের চিত্র তুলে ধরে।
তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ:
- চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বুলডোজার ও এক্সকাভেটরের মাধ্যমে বাড়িটি ধ্বংসের ঘটনা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করে।
- ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার হাতে আগুন দিয়ে ধ্বংস করা ঘটনাও এই এলাকাকে রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে পরিচিত করেছে।
- আজকের বুলডোজার নিয়ে সমাবেশ প্রমাণ করে যে, ছাত্র-জনতার মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও ঐতিহাসিক প্রতিশোধের অনুভূতি এখনও শক্তিশালী।
ধানমন্ডি ৩২-এর ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আবারও উন্মোচিত হয়েছে। বুলডোজার নিয়ে ছাত্র-জনতার উপস্থিতি, বিভিন্ন স্লোগান, এবং জনসাধারণের উত্তেজনা দেশব্যাপী রাজনৈতিক সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাজনৈতিক উত্তেজনা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া আসতে থাকবে। ধানমন্ডি ৩২ কেবল একটি ঠিকানা নয়, এটি এখন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও জনগণের রাজনৈতিক চেতনার প্রতীক।
MAH – 13849 I Signalbd.com



