বাংলাদেশ

ডেঙ্গু কেড়ে নিল আরও ৫ প্রাণ, একদিনে হাসপাতালে ১১৩৯ রোগী ভর্তি

Advertisement

চলতি বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩৬, একদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৩৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা অব্যাহত রয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ১ হাজার ১৩৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনার মতো বড় শহরগুলোতে রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

নতুন মৃত্যুর এবং ভর্তি তথ্য

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, গত একদিনে ঢাকায় পাঁচজন রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ময়মনসিংহে দুইজন করে এবং ঢাকা উত্তরে একজন মারা গেছেন।

নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা বিভাগ ভিত্তিক:

  • ঢাকা (সিটি করপোরেশন বাইরে) – ২৪৬
  • ঢাকা উত্তর সিটি – ১৮২
  • ঢাকা দক্ষিণ সিটি – ১১৮
  • বরিশাল – ১৮১
  • চট্টগ্রাম – ১৪১
  • খুলনা – ১১৯
  • ময়মনসিংহ – ৯৬
  • রাজশাহী – ৪৬
  • রংপুর – ৯
  • সিলেট – ১

একদিনে মোট ভর্তি রোগী ১ হাজার ১৩৯, যা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং হাসপাতালের জন্য চাপ বৃদ্ধি করছে।

চলতি বছরের পরিসংখ্যান

২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩৬। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মৃত্যু হয়েছে সর্বাধিক ১৫৮ জনের, ঢাকা উত্তরে ৫৮ জন, বরিশালে ৪৪ জন, চট্টগ্রামে ২৫ জন, রাজশাহীতে ১৭ জন, ময়মনসিংহে ১৫ জন, খুলনায় ১১ জন, ঢাকায় (সিটি ছাড়া) ৭ জন এবং সিলেটে একজন।

এই বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮৪ হাজার ৯৯৭। এর মধ্যে ৮১ হাজার ৪৪২ জন ইতোমধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। ২০২৪ সালে একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।

ঢাকা শহরের পরিস্থিতি

ঢাকা শহরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত জটিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সবথেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে, তবে ঢাকা উত্তরে ও সিটিতে নতুন রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহরের অপর্যাপ্ত পানির নিষ্কাশন এবং ভিজে থাকা আবর্জনা মশার প্রজননের জন্য বড় ভূমিকা রাখছে।

শহরের হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যেই ভর্তি রোগীর চাপ মোকাবেলায় সীমিত পরিসরে সক্ষম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালে অতিরিক্ত চিকিৎসক এবং পর্যবেক্ষণ কক্ষ স্থাপন করছে।

অন্য বিভাগগুলোর পরিস্থিতি

বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বরিশাল বিভাগে ১৮১ জন, চট্টগ্রামে ১৪১ জন এবং খুলনায় ১১৯ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। ময়মনসিংহে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৬ জন।

রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটে সংখ্যাটি তুলনামূলকভাবে কম হলেও রোগীর বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এসব অঞ্চলেও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে:

  1. পানি জমতে দেওয়া যাবে না – খোলা টব, ড্রাম বা গাছের তলায় জল জমলে তা মশার প্রজনন ক্ষেত্র।
  2. মশা আটকানোর জন্য স্প্রে ও মশারি ব্যবহার করা।
  3. ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করা।
  4. বাড়ির আশেপাশে আবর্জনা ও ভেজা জায়গা পরিষ্কার রাখা।

মতামত

ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নগরায়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। বিশেষ করে, বর্ষার পর ও গরমের সময়ে মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায়। তারা বলছেন, স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সতর্ক না হলে, হাসপাতালে রোগীর চাপ ক্রমাগত বেড়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা আরও যোগ করেছেন, রোগ প্রতিরোধে কমিউনিটি সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং দ্রুত ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক শনাক্তকরণ অপরিহার্য।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জনের মৃত্যু এবং ১ হাজার ১৩৯ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দেশের জন্য সতর্কবার্তা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হতে পারে। নাগরিকদের সতর্কতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায়।

এম আর এম – ২২৬৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button