দিল্লিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতীয় গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এ কারণে ভারতীয় উপহাইকমিশনার পবন ভাদেকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বার্তা জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতের রাজধানীতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যমে উপস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য সহায়ক নয়। অবিলম্বে এই কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য ভারতকে অনুরোধ করা হয়েছে।
ভারতীয় দূতকে তলবের বিস্তারিত
বুধবার (১২ নভেম্বর) সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক ভারতীয় উপহাইকমিশনার পবন ভাদেকে তলব করেন। তলবের সময় ভারতীয় কূটনীতিককে জানানো হয়েছে যে, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন ও পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমন ধরনের পদক্ষেপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং এটি দুই দেশের মধ্যে গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক নয়।
পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান
শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারাধীন থাকা কারণে তার অবস্থানকে ঘিরে কূটনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ মনে করছে, ভারতীয় গণমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে তাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া চলমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
এই পরিস্থিতি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংবেদনশীলতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের উদ্বেগ ও অনুরোধ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় কূটনীতিককে অনুরোধ করেছে যে, অবিলম্বে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যমে কথা বলা বন্ধ করার পদক্ষেপ নিন এবং এ বিষয়ে নয়াদিল্লিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করুন।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই বার্তা প্রদান করা হয়েছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রম দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতীয় গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করার পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক। এটি কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে শক্ত অবস্থানে রাখছে এবং সম্ভাব্য দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ কেবল বাংলাদেশ নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের সংবেদনশীল বিষয়কে কেন্দ্র করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আস্থা বজায় রাখতে সহায়ক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতকে এই বার্তা প্রেরণ করা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের একটি উপায় এবং এটি দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতের সম্পর্ক সুসংহত করতে সহায়ক হবে।
ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
পরিস্থিতি বর্তমানে সংবেদনশীল। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় পক্ষের সহযোগিতা এবং বাংলাদেশি অনুরোধ গ্রহণ করলে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হতে পারে। তবে, যদি এটি অবহেলা করা হয়, দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে স্থায়ী তিক্ততা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ আশা করছে, ভারতের পক্ষ থেকে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ বন্ধ করা হবে।
ভারতীয় দূতকে তলব করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণমাধ্যমে কথা বলা বন্ধের আহ্বান জানানো বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি দুই দেশের সম্পর্কের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা কমানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া পদক্ষেপ।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবেলা করতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কার্যকর কূটনৈতিক সংলাপ অপরিহার্য।
এম আর এম – ২২১০,Signalbd.com



