তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ (শুরায়ে নেজাম) ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সালের বিশ্ব ইজতেমা আগামী বছরের জানুয়ারির পরিবর্তে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোমবার (৩ নভেম্বর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।
শুরায়ে নেজামের নেতা মুফতি কেফায়াতুল্লাহ আজহারী জানান, সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে মার্চে এবারের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়।
ইজতেমার আয়োজন ও সরকারের সমন্বয়
তাবলিগ জামাত জানিয়েছে, ইজতেমা মাঠে বিদেশি মেহমানদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা জারি করা হবে। এছাড়া ইজতেমা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম শুরায়ে নেজামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ব্যস্ত থাকায় দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমার ঐতিহ্য ও গুরুত্ব
বিশ্ব ইজতেমা প্রতি বছর বাংলাদেশের টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী ধর্মীয় সমাবেশ। মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন দেশের মানুষের অংশগ্রহণ এই ইজতেমাকে আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ করে।
গত বছর অনুষ্ঠিত ইজতেমার সময় কিছু সংঘর্ষ এবং সাদপন্থীদের হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এতে নিহত ও আহতদের সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এ বছর ইজতেমার নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হয়েছে।
ইজতেমা সময়সূচি ও স্থান
২০২৬ সালের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে টঙ্গী কেন্দ্রীয় মাঠে। মার্চ মাসে নির্দিষ্ট তারিখে তিনদিনব্যাপী ইজতেমার আয়োজন হবে। শুরায়ে নেজামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী মাসের মধ্যে সকল বিদেশি অতিথির জন্য ভিসা প্রক্রিয়ার দিকনির্দেশনা প্রদান করা হবে।
ইজতেমা সময়সূচি নিশ্চিত হওয়ার পর সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনরা সেবামূলক কার্যক্রম, খাদ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করবেন।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ইজতেমার আয়োজনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে না বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মার্চ মাসে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলে আগের বছরের তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কার্যকর হবে। এছাড়া ইজতেমার মাধ্যমে দেশের পর্যটন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি
গতবারের সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বাহিনী মাঠে কড়া নজরদারি করবে। শুরায়ে নেজাম এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিকল্পনা করছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুফতি কেফায়াতুল্লাহ আজহারী বলেন, “নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু আয়োজন আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। সকলের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করব।”
বিশ্লেষক মতামত
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্চ মাসে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিদেশি মেহমানদের উপস্থিতি দেশীয় বাণিজ্য ও পর্যটন ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
শিক্ষাবিদ ও ধর্মীয় বিশ্লেষকরা আরও বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইজতেমার সময়সূচি নির্ধারণ করা যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত। এটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তাবলিগ জামাত জানিয়েছে, মার্চে ইজতেমা সফলভাবে আয়োজন করতে সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
শুরায়ে নেজামের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অতিথিদের সুবিধার্থে সেবা, খাদ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হবে।
এম আর এম – ২০৭০,Signalbd.com



