হাসিনাপরিবারের প্লট দুর্নীতি মামলায় খুরশীদকে নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি
সোমবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের অভিযোগ সংক্রান্ত মামলার তদন্তকালে চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া।
তদন্তকালে তিনি আদালতকে জানান, মামলার ৫ নম্বর আসামি খুরশীদ আলমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। খুরশীদ আলম ব্যক্তিগতভাবে এই প্লট বরাদ্দ থেকে কোনো সুবিধা পাননি বলে স্বীকার করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তবে দুদকের আইনজীবীরা আদালতে নথিগত প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগের বিরোধিতা করেছেন।
তদন্তের বিস্তারিত
তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া আদালতে জানান, তদন্তের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের ২১ জনের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি নিয়েছেন। সেই জবানবন্দিতে কেউই খুরশীদ আলমের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করেননি।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, খুরশীদ আলম কোনওভাবে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, মামলার প্রমাণাদি এবং নথি বিশ্লেষণে কিছু তথ্য বিদ্যমান, যা আদালতে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হবে।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৬ নভেম্বর খুরশীদ আলমের অবশিষ্ট জেরার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে মামলার অন্য আসামিদেরও সাক্ষ্য গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মামলার পটভূমি
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করে। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নাম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মোট ৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছিল।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার অসৎ উদ্দেশ্যে প্লট বরাদ্দ গ্রহণ করেছেন। বরাদ্দপ্রাপ্তরা প্রকৃতভাবে এর জন্য যোগ্য ছিলেন না।
খুরশীদ আলমের অবস্থান
রাজউকের সাবেক সদস্য খুরশীদ আলম তিন মামলায় জামিনের আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর হয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। পরে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেন।
তদন্তের প্রাথমিক ধাপে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া ব্যক্তিরা খুরশীদ আলমের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণিত অভিযোগ করতে পারেননি। ফলে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দোষ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। তবে আদালতে মামলা চলমান থাকায় চূড়ান্ত রায় এখনও আসেনি।
সাক্ষ্যগ্রহণের কার্যক্রম
সাক্ষ্য গ্রহণে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওসমান গণি, গাজীপুরের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুর রহমান, গুলশানের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার রফিকুল ইসলাম, কর আইনজীবী হানিফ দিহিদার, কর অঞ্চল ১০ এর অফিস সহায়ক আবদুর রহিম, এবং মোটর ক্লিনার উজ্জ্বল হোসেন।
এখন পর্যন্ত তিন মামলায় মোট ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৯ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
মামলার প্রভাব
পূর্বাচল প্রকল্পের এই মামলা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তদন্তের ফলাফল জনগণের নজর কাড়ছে। খুরশীদ আলমের নির্দোষ স্বীকারোক্তি এই মামলার মূল প্রভাবশালী চরিত্রদের ভূমিকা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মামলার পরবর্তী পর্যায়ে আদালতের সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ক্ষমতার ব্যবহার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে পারে।
ভবিষ্যৎ ধাপ
মামলার কার্যক্রম চলমান থাকায় আগামী জেরা ও সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের চূড়ান্ত রায় কবে আসবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে খুরশীদ আলমের নির্দোষ স্বীকারোক্তি এই মামলার দিক নির্দেশনা পরিবর্তন করতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মামলার চূড়ান্ত রায় এবং প্রমাণের ভিত্তিতে সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
এম আর এম – ২০৬৭,Signalbd.com



