জর্ডানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য রয়্যাল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার’ (RISSC) ২০২৬ সালের ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিম’ তালিকা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবারও শীর্ষ ৫০ জনের তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
প্রভাবশালী মুসলিমদের মর্যাদাপূর্ণ তালিকা
বিশ্বের মুসলিম সমাজে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর ‘দ্য মুসলিম ৫০০: দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস’ শিরোনামে একটি তালিকা প্রকাশ করে জর্ডানভিত্তিক আরআইএসএসসি। এই তালিকায় রাজনীতি, ধর্ম, সমাজসেবা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও মিডিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য মুসলিম নেতারা স্থান পান।
২০২৬ সালের এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তানের ইসলামি আইনবিদ ও আলেম শেখ মুহাম্মদ তাকি উসমানি এবং তৃতীয় স্থানে ইয়েমেনি সুফি আলেম শেখ হাবিব উমর বিন হাফিজ।
ড. ইউনূসের স্থান ও অবদান
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শীর্ষ ৫০ জন প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় ৫০তম স্থানে রয়েছেন।
ড. ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে সমাজসেবামূলক কর্মসূচি এবং অর্থনৈতিক উদ্যোক্তা সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। তিনি দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ২০২৫ সালের আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বিশ্বব্যাপী অন্যান্য প্রভাবশালী মুসলিমদের তালিকা
শীর্ষ দশের তালিকায় আছেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি (৪র্থ), জর্ডানের বাদশাহ এইচএম আবদুল্লাহ দ্বিতীয় (৫ম), আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড শেখ ড. আহমদ মুহাম্মদ আল-তায়্যিব (৬ষ্ঠ), তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রজব তাইয়্যেব এরদোগান (৭ম), সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল-আজিজ আল-সৌদ (৮ম), সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান (৯ম) এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম (১০ম)।
শীর্ষ ৫০ ছাড়াও ‘দ্য ৪৫০ লিস্ট’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ থেকে আরও দুজন নারী স্থান পেয়েছেন। ড. হামিদা হোসেন সামাজিক সমস্যা ক্ষেত্রে এবং রাজিয়া সুলতানা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত।
তালিকা প্রকাশের প্রভাব ও গুরুত্ব
‘দ্য মুসলিম ৫০০’ তালিকা শুধু মর্যাদা প্রদানের মাধ্যম নয়; এটি মুসলিম বিশ্বের নেতাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং তাদের অবদানকে তুলে ধরার একটি প্ল্যাটফর্ম।
ড. ইউনূসের তালিকাভুক্তি বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে তার অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের স্বীকৃতি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নেবে।
ড. ইউনূসের সামাজিক প্রভাব
ড. ইউনূস মাইক্রোফাইন্যান্সের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের ধারণাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করেছেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে ঋণ প্রদান করে তাদের স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতার সুযোগ দিয়েছেন। তাঁর কাজের মাধ্যমে বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে।
ড. ইউনূসের অবদান শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা এবং মানবিক কার্যক্রমেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বসেরা প্রভাবশালী মুসলিম তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। তার কাজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, যা বাংলাদেশি সমাজে উদ্ভাবন ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নের পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
এম আর এম – ২০৫২,Signalbd.com



