বাংলাদেশ

জুলাই সনদের আলোকে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত

Advertisement

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণীত জুলাই সনদের আলোকে পুলিশের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জনবিশ্বাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে এটি অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হবে।

পুলিশ সংস্কারের নতুন ধাপ

দেশে পুলিশের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, পেশাদারিত্ব ও জনবিশ্বাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি ওঠে। চলতি বছরের জুলাই মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে প্রণীত জাতীয় সনদ সেই প্রক্রিয়ার ভিত্তি স্থাপন করে। সেই সনদের আলোকে পুলিশের কর্মকাণ্ডে সংস্কারের অংশ হিসেবে ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।

খসড়া অনুমোদিত হলে এটি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কাঠামোতে পরিবর্তন আনা এবং জনসাধারণের সঙ্গে পুলিশের বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হবে।

খসড়া অধ্যাদেশে প্রস্তাবিত কাঠামো

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি কমিশনের কাঠামো, এখতিয়ার ও কার্যাবলি নির্ধারণ করে খসড়া প্রস্তুত করেছে। অধ্যাদেশে প্রস্তাব করা হয়েছে যে একজন অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন।

কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, একজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা (গ্রেড-২ বা তার ঊর্ধ্বে), একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, পুলিশ একাডেমির একজন সাবেক অধ্যক্ষ, আইন বা অপরাধতত্ত্ব বিষয়ের অধ্যাপক এবং কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন মানবাধিকার কর্মী।

চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগীয় বিচারপতির সমান, আর অন্যান্য সদস্যদের পদমর্যাদা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমান নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রত্যেক সদস্য চার বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন এবং পুনঃনিয়োগের সুযোগ থাকবে না।

কমিশনের কার্যপরিধি ও ক্ষমতা

খসড়া অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কমিশনের যেকোনো নির্দেশনা বা সুপারিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং তার প্রতিবেদন দিতে হবে। যদি কোনো সুপারিশ বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দেয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একই সময়ের মধ্যে কমিশনকে জানাতে হবে। কমিশন পুনর্বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

অধ্যাদেশে কমিশনের প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক কাঠামো, কর্মপরিধি, সদস্যদের চাকরির শর্ত, অপসারণের কারণ, পুলিশ শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা, অভিযোগ তদন্ত, পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং পুলিশ প্রধান নিয়োগের জন্য নির্দেশিকা সংক্রান্ত বিস্তারিত বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নির্বাচন প্রক্রিয়া ও কোরাম

কমিশন গঠনের জন্য সাত সদস্যের একটি নির্বাচন কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য সদস্যরা। নির্বাচন প্রক্রিয়াটি ৩০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে এবং কমপক্ষে পাঁচ সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম পূর্ণ হবে।

পুলিশ সংস্কারের প্রেক্ষাপট

পুলিশ সংস্কারের দাবি বছরের শুরু থেকেই ওঠে, কিন্তু তা সুনির্দিষ্ট কাঠামোর অভাবে দীর্ঘ সময় স্থগিত থাকে। জুলাই মাসে প্রণীত জাতীয় সনদে এই সংস্কারের মূলনীতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। খসড়া অধ্যাদেশের মাধ্যমে পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যকারিতা নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে।

প্রভাব ও প্রত্যাশা

এই অধ্যাদেশ অনুমোদিত হলে পুলিশের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ মানুষ ও পুলিশ বাহিনীর মধ্যে আস্থা পুনঃস্থাপন সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কমিশনের কার্যক্রম অনুসারে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও পদোন্নয়ন প্রক্রিয়া আরও সুষ্ঠু হবে। এছাড়া অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার ফলাফল জনসাধারণের কাছে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।

‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত হওয়া দেশের পুলিশ সংস্কারের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। জুলাই সনদে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে অনুমোদনের পর পর্যবেক্ষণ ও কার্যকরী বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণই হবে তার সফলতার মূল চাবিকাঠি।

এম আর এম – ২০৫১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button