বাংলাদেশ

জাতীয় নির্বাচনের পর হবে বিশ্ব ইজতেমা

Advertisement

আগামী বছর দেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। এই মাহাত্ম্যপূর্ণ ইসলামী ধর্মীয় সমাবেশ, যা প্রতিবছর দেশের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত, এবার অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর, এমন তথ্য জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

ড. খালিদ হোসেন আজ রবিবার (২ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে তাবলিগ জামাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী বিশ্ব ইজতেমা জাতীয় নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত হবে। আমরা তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সকল প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছি। দেশের ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট।”

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন:

  • স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী,
  • শিল্প ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান,
  • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি,

তারা সকলেই তাবলিগ জামাতের সঙ্গে ইজতেমার নিরাপত্তা, প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বিশ্ব ইজতেমা: ধর্মীয় এক মিলনক্ষেত্র

বিশ্ব ইজতেমা হলো তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো মুসলিম এতে অংশ নেন। এই ইজতেমায় কোরআনের তত্ত্বাবধানে ধর্মীয় শিক্ষণ, প্রচারণা, এবং সামাজিক ও মানবিক সহায়তার কাজ করা হয়।

ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য হলো মুসলিম সম্প্রদায়কে একত্রিত করা, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রসার ঘটানো এবং সমাজে শান্তি ও সহমর্মিতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখা। দেশের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি

বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলে কয়েক লাখ মানুষের ভিড় হয়। তাই এই সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত থাকবে। আমরা জনসাধারণের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং চলাচলের জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

উল্লেখ্য, আগের বছরগুলোতে ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র, খাবারের ব্যবস্থা, বিশ্রামের স্থান এবং জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এবারও সেই রীতি অনুসরণ করা হবে এবং আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং জরুরি পরিষেবা সহজ করা হবে।

তাবলিগ জামাতের ভূমিকা

তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ধর্মীয় সংগঠন, যা ১৯২৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে তারা ধর্মীয় শিক্ষাদান, সাধারণ মানুষকে ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত করা এবং সামাজিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

ড. খালিদ হোসেন বলেন, “তাবলিগ জামাতের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা ও সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা ইজতেমার সাংগঠনিক দায়িত্ব বহন করে থাকে। আমরা নিশ্চিত করছি যে সকল প্রস্তুতি দেশীয় আইন, সামাজিক নিয়ম এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।”

করোনা পরবর্তী প্রস্তুতি এবং স্বাস্থ্যবিধি

বিশ্ব ইজতেমা এখন করোনা মহামারির পর একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। ভিড় ব্যবস্থাপনা, হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ড. খালিদ হোসেন আরও জানান, “স্বাস্থ্যবিধি এবং জনস্বাস্থ্যের প্রতি আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। সকল অংশগ্রহণকারী যেন নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

ইজতেমার সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

বিশ্ব ইজতেমা শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, এটি দেশের অর্থনীতি এবং সমাজেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। সমাবেশ চলাকালীন স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন, খাদ্য ও আবাসন খাত উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হয়।

স্থানীয় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ইজতেমার সময় ব্যাপক পরিমাণে লাভ করেন। এছাড়াও, এটি দেশের পর্যটন খাতেও সহায়ক। বিদেশি মুসলিমরা ইজতেমায় অংশ নিতে আসলে দেশের আন্তর্জাতিক ইমেজও বৃদ্ধি পায়।

রাষ্ট্র এবং ধর্মের সমন্বয়

বিশ্ব ইজতেমা একটি উদাহরণ যে, ধর্ম এবং রাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয় কিভাবে সম্ভব। সরকার ধর্মীয় সমাবেশের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক সুবিধা নিশ্চিত করে। অন্যদিকে ধর্মীয় সংগঠন সমাজে শান্তি, সহমর্মিতা এবং নৈতিক মূল্যবোধ প্রচারের মাধ্যমে সমাজকে সংহত করে।

ড. খালিদ হোসেন বলেন, “ইজতেমা আমাদের দেখায় যে ধর্ম এবং রাষ্ট্র একে অপরের পরিপূরক। আমরা সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সংরক্ষণে একসঙ্গে কাজ করি।”

অংশগ্রহণকারীদের জন্য নির্দেশিকা

বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে:

  • নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সরকারি নির্দেশনা মানা আবশ্যক।
  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক ব্যবহার ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্য উৎসাহ প্রদান।
  • ভিড় নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা অনুসরণ।
  • তাবলিগ জামাতের স্থানীয় সংগঠকদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ইজতেমার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ড. খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, বিশ্ব ইজতেমার অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বছর ইজতেমা আরও সুশৃঙ্খল, নিরাপদ এবং সুসংগঠিত হবে।

তাবলিগ জামাতও বিভিন্ন দেশের মুসলিম প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানাবে এবং ইজতেমার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা, শান্তি এবং সামাজিক সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দেবে।

MAH – 13595 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button