শনিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিন বাহিনীর প্রধান: সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তিন বাহিনীর প্রধানদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন যেন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদভাবে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে তাদের দায়িত্বের প্রতি সতর্ক থাকতে বলেন এবং নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার গুরুত্ব জোর দেন।
নির্বাচন প্রস্তুতি ও বাহিনীর পরিকল্পনা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন যেন নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ হয়, তার জন্য তিন বাহিনীর সদস্যরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত থাকবেন। তিনি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীকে নির্বাচনী এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন।
বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রধানরা প্রধান উপদেষ্টাকে বিস্তারিতভাবে অবহিত করেন যে, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় ৯০ হাজার সেনাসদস্য, ২,৫০০ নৌবাহিনীর সদস্য এবং বিমানবাহিনীর কিছু সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া, প্রতিটি উপজেলার একটি কোম্পানি সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশের নিরাপত্তা ও বাহিনীর ভূমিকা
প্রধান উপদেষ্টা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সামরিক বাহিনীর কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, গত ১৫ মাস ধরে সব বাহিনী দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
নাসীরুদ্দীন আরও বলেন, নির্বাচনকে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ রাখতে বাহিনীর সদস্যদের সতর্কতা ও দায়বদ্ধতার প্রয়োজন। এই বৈঠক মূলত নিরাপত্তা ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে বিভিন্ন সরকারি ও সামরিক সংস্থা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এর আগে নির্বাচন পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী কার্যক্রম পরিকল্পনা করে আসছে।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী নিয়মিতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মহড়া ও প্রস্তুতি নেয়। এই বৈঠক সেই প্রক্রিয়ার একটি অংশ, যাতে নির্বাচনের সময় কোনও ঝুঁকি না থাকে।
বৈঠকের বিশদ ও বিষয়বস্তু
বৈঠকে আলোচনা হয়েছে:
- নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বাহিনীর মোতায়েন
- প্রতিটি উপজেলায় সেনা কোম্পানির স্থাপন
- নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব ও প্রস্তুতি
- নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা
- সশস্ত্র বাহিনী দিবসের আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ
এছাড়া, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
বিশেষজ্ঞ মতামত ও বিশ্লেষণ
রাজনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানদের বৈঠক নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের আগে বাহিনীর প্রস্তুতি নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য করতে সহায়তা করবে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, প্রতিটি উপজেলায় সেনা মোতায়েন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া করার ফলে ভোটগ্রহণের সময় অসহযোগী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
শনিবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানদের বৈঠক দেশের নিরাপত্তা ও নির্বাচনের প্রস্তুতিকে শক্তিশালী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নির্বাচনের সময় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের সমন্বয় বাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ নিশ্চিত করে এবং নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আয়োজন করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
এম আর এম – ২০৩৮,Signalbd.com



