বেতন বাড়ানোসহ তিন দফা দাবিতে পরীক্ষা বর্জনের হুমকি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বেতন বাড়ানোসহ তিন দফা দাবিতে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনসহ নতুন কর্মসূচি নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শিক্ষক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, যদি তাদের দাবি পূরণ না হয়, তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে লাগাতার অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি শুরু হবে।
দাবিগুলো কী
সহকারী শিক্ষকদের প্রধান তিনটি দাবি হলো:
- দীর্ঘদিনের বেতন বাড়ানো – সহকারী শিক্ষক পদটি বর্তমানে ১১তম গ্রেডে বেতনভুক্ত, যা অনেক শিক্ষকের দাবি অনুযায়ী যথেষ্ট নয়।
- উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন – ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে যথাযথ গ্রেড প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধান।
- শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিতকরণ – দীর্ঘদিন ধরে নির্দিষ্ট গ্রেডে পদোন্নতি নিয়ে বিভাজন ও জটিলতার অভিযোগ।
শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, এই দাবিগুলো পূরণ না হলে তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবেন।
সংবাদ সম্মেলনের বিবরণ
আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের নেতারা দাবি জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শাহিনুর আল-আমীন, আনোয়ারুল ইসলাম, নূরে আলম সিদ্দিকী রবিউল, অজিত পাল, তপন কুমার মণ্ডল, আনিসুর রহমান, শাহিনূর আক্তার ও সাবেরা বেগম।
শাহিনুর আল-আমীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, “সরকার আমাদের দাবির বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আমরা নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে কর্মসূচি শুরু করবো।”
কর্মসূচির বিস্তারিত
শিক্ষক সংগঠনগুলো জানিয়েছে যে কর্মসূচি ধাপে ধাপে হবে:
- ২৩ ও ২৪ নভেম্বর: অর্ধদিবস কর্মবিরতি
- ২৫ ও ২৬ নভেম্বর: পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি
- ২৭ নভেম্বর: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান ধর্মঘট
- ৮ ডিসেম্বর থেকে: বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন ও লাগাতার অনশন কর্মসূচি
সংগঠনগুলো জানিয়েছেন যে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা এবং পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় কোনো প্রভাব ফেলবে না, তবে দাবি পূরণ না হলে তারা কঠোর আন্দোলনের পথে যাবে।
আন্দোলনের পূর্বপটভূমি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন ও গ্রেড বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন। ২০২৪ সালে তারা একই দাবিতে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন এবং একটি সময় বেতন কমিশনে সমস্যার সমাধানের আশ্বাস পেয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ হয়নি।
শিক্ষক নেতারা বলেন, “আমাদের দাবি দীর্ঘদিনের এবং শিক্ষকদের স্বার্থ সুরক্ষায় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত সরকারী প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবায়ন হয়নি।”
শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন হয়, তবে তা শিক্ষার্থীদের ফলাফলের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। তবে শিক্ষক নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন যে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এছাড়া, শিক্ষকদের আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে, কারণ এটি শিক্ষকদের অধিকার ও বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর করতে সাহায্য করবে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত সরকারী কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে গত অভ্যন্তরীণ সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবিগুলো পে কমিশনের আওতায় রয়েছে, তবে তার বাস্তবায়ন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার যদি সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়, তবে আন্দোলন আরও তীব্র আকার নিতে পারে এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহকারী শিক্ষকরা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি। তাদের অধিকার ও বেতন কাঠামোর সমস্যার সমাধান শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আন্দোলন সফল হলে ভবিষ্যতে শিক্ষকদের পদোন্নতি এবং বেতন কাঠামোর ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তারা ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছেন, যা তাদের দাবি পূরণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ভবিষ্যতের চিত্র
শিক্ষক নেতারা জানাচ্ছেন, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে কর্মসূচি শুরু হলেও তা প্রাথমিক শিক্ষার কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাবে না। তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন আরও দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি কত দ্রুত সমাধান হবে তা সরকারের পদক্ষেপের উপর নির্ভর করছে।



