বাংলাদেশ

পুলিশ ক্যাডারের চার কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত ডিআইজি

Advertisement

বাংলাদেশ পুলিশের চার কর্মকর্তা সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়েছেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) পদে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই চার কর্মকর্তা নিজ নিজ ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন শেষে যোগ্যতার স্বীকৃতি হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। তাঁরা হলেন—
১. অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (ATU) পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহরিয়ার,
২. বিশেষ শাখার (SB) এসপি ড. মোহাম্মদ আবদুল কাদের,
৩. অপরাধ তদন্ত বিভাগের (CID) এসপি মো. মাসুম বিল্লাহ তালুকদার,
৪. এবং মো. জান্নাতুল হাসান

প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে তাঁদের যোগদানের পত্র পাঠাবেন। আদেশটি জনস্বার্থে জারি করা হয়েছে এবং তাঁদের যোগদানের তারিখ থেকে এটি কার্যকর হবে।

দেশের পুলিশ ব্যবস্থায় পদোন্নতির তাৎপর্য

বাংলাদেশ পুলিশের কাঠামোতে “অতিরিক্ত ডিআইজি” পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদটি একজন কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব ও কৌশলগত নেতৃত্বের আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যায়। এটি কেবল ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং গোটা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিরও প্রতিফলন।

পুলিশ বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়ার ধারা বেশ শক্তিশালী হয়েছে। এতে কর্মপ্রেরণা বাড়ছে, যা মাঠপর্যায়ের কর্মদক্ষতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

অতিরিক্ত ডিআইজি পদে উন্নীত কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

মো. শাহরিয়ার – অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (ATU)

অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমের অন্যতম শক্তিশালী বাহিনী। এসপি মো. শাহরিয়ার দীর্ঘদিন ধরে ইউনিটটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। সন্ত্রাসবিরোধী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, অনলাইন চরমপন্থা প্রতিরোধ এবং সাইবার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনায় তাঁর ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।

ড. মোহাম্মদ আবদুল কাদের – বিশেষ শাখা (SB)

ড. আবদুল কাদের বিশেষ শাখায় (Special Branch) দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘ সময় ধরে। জাতীয় নিরাপত্তা, কূটনৈতিক সুরক্ষা ও ভিআইপি প্রটোকল সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে তিনি বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। তাঁর গবেষণাধর্মী মনোভাব ও নীতিগত নেতৃত্ব তাকে সহকর্মীদের মধ্যে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে।

মো. মাসুম বিল্লাহ তালুকদার – অপরাধ তদন্ত বিভাগ (CID)

CID বাংলাদেশের অপরাধ তদন্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এসপি মাসুম বিল্লাহ তালুকদার বিভিন্ন উচ্চপ্রোফাইল মামলা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ উদ্ঘাটনে তিনি দক্ষতার সঙ্গে দল পরিচালনা করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে একাধিক সাইবার অপরাধ, ব্যাংক জালিয়াতি ও অর্থপাচার মামলায় সাফল্য এসেছে।

মো. জান্নাতুল হাসান

মো. জান্নাতুল হাসান মাঠপর্যায়ের পুলিশি কর্মকাণ্ডে বিশেষভাবে পরিচিত। সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে সমাজে আস্থা অর্জন করেছেন তিনি। তাঁর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পেশাদারিত্ব তাঁকে সহকর্মীদের কাছে অনুপ্রেরণার উৎসে পরিণত করেছে।

পদোন্নতির প্রেক্ষাপটে পুলিশের আধুনিকায়ন ও পরিবর্তন

বাংলাদেশ পুলিশ বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের নতুনভাবে প্রস্তুত করছে। আধুনিক প্রযুক্তি, ডিজিটাল নজরদারি ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ প্রশিক্ষণসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই চার কর্মকর্তার পদোন্নতি কেবল তাঁদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়—এটি পুলিশের পেশাগত উন্নয়ন, দক্ষ নেতৃত্ব গঠন এবং জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার প্রতিফলন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে স্বচ্ছ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এতে বাহিনীর মধ্যে কর্মস্পৃহা বেড়েছে এবং সেবা প্রদানের মান উন্নত হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের সাফল্য ও অবদান

পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশব্যাপী অপরাধ দমন, মাদকবিরোধী অভিযান, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন।

বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, অনলাইন প্রতারণা রোধ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য দমনসহ নানা ক্ষেত্রে পুলিশের কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়েছে।

নতুন পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা এসব উদ্যোগে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন।

পুলিশ বাহিনীতে নারী ও তরুণ কর্মকর্তাদের উত্থান

বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের কাঠামোয় নারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণও বাড়ছে। তরুণ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বিভিন্ন ইউনিটে নতুন উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশ ক্যাডারে মেধাবী তরুণরা যোগ দিচ্ছেন, যাঁরা প্রযুক্তিনির্ভর পুলিশিং-এ আগ্রহী। এই পরিবর্তন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

পুলিশ সংস্কারে সরকারের দৃষ্টি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সরকার ইতিমধ্যে পুলিশ সংস্কারে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

  • পুলিশের কাঠামো আধুনিকীকরণ,
  • তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর অপরাধ তদন্ত,
  • পেশাগত প্রশিক্ষণ ও বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা,
  • দুর্নীতি ও অপব্যবহার রোধে শৃঙ্খলা জোরদার,
  • এবং জনবান্ধব পুলিশ গঠনের রোডম্যাপ বাস্তবায়ন

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর একযোগে কাজ করছে যাতে পুলিশ বাহিনী আরও দক্ষ, মানবিক ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।

জনগণের প্রত্যাশা ও পুলিশের দায়বদ্ধতা

দেশের সাধারণ মানুষ আজ পুলিশের কাছ থেকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও মানবিক সেবা প্রত্যাশা করছে। পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ, নৈতিকতা শিক্ষা ও সেবা মনোভাব উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব এখন আরও বেড়ে গেছে। তাঁদের নেতৃত্বে বাহিনীতে নতুন প্রেরণা ও গতিশীলতা আসবে বলে আশা করছে পুলিশ প্রশাসন।

বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে প্রতিটি পদোন্নতি নতুন দায়িত্ব ও নতুন প্রত্যয়ের প্রতীক। এই চার কর্মকর্তার পদোন্নতি শুধু তাঁদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়—এটি বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর সামগ্রিক উন্নয়ন, নিষ্ঠা, দক্ষতা ও সেবার মান বৃদ্ধির একটি বড় পদক্ষেপ।

তাঁদের অভিজ্ঞতা, সততা ও নেতৃত্ব ভবিষ্যতে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে—এমন প্রত্যাশা করছে গোটা জাতি।

MAH – 13560 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button