বাংলাদেশ

আসন্ন নির্বাচনে পুলিশকে শতভাগ নিরপেক্ষ থাকতে হবে: ডিএমপি কমিশনার

Advertisement

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, পুলিশকে শতভাগ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির প্রতি দুর্বলতা দেখানো যাবে না। জনগণের নিরাপত্তা এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই পুলিশের প্রধান দায়িত্ব।”

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ডিএমপির গ্র্যান্ড কল্যাণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন থানার প্রায় ৮৫০ জন পুলিশ সদস্য।

নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিয়ে কমিশনারের কঠোর নির্দেশনা

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, “ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশের মানুষ বহু বছর ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেজন্য পুলিশের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আইনের রক্ষক, কোনো দলের নয়। নির্বাচনের সময় কোনোভাবেই রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব বা প্রভাবের সুযোগ দেওয়া যাবে না। জনগণ যেন বিশ্বাস করতে পারে যে পুলিশ সত্যিই তাদের নিরাপত্তার জন্য মাঠে আছে, সেটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, নির্বাচন ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে।

বেআইনি সমাবেশে সতর্ক থাকার আহ্বান

সভায় কমিশনার বেআইনি রাজনৈতিক সমাবেশ ও সহিংসতা মোকাবেলায় পুলিশের সদস্যদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “যে কোনো অস্থিতিশীলতা বা সহিংস পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কিন্তু সেই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, জনগণের সঙ্গে যেন দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি না হয়।”

তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা অনেক ত্যাগ ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছি। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হলে প্রতিটি সদস্যকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।”

কল্যাণ সভায় কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও ঘোষণা

গ্র্যান্ড কল্যাণ সভায় পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রস্তাব শোনেন কমিশনার। তিনি আশ্বাস দেন, দায়িত্ব পালনকালে যদি কোনো সদস্য আহত হন, তবে তার চিকিৎসার পুরো ব্যয়ভার ডিএমপি বহন করবে।

তিনি বলেন, “পুলিশ সদস্যদের কল্যাণই আমাদের অগ্রাধিকার। দায়িত্ব পালনের সময় কেউ আহত হলে বা কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে প্রতিষ্ঠান তার পাশে থাকবে।”

এ সময় তিনি ডিএমপির সব কর্মকর্তা ও সদস্যদের নিয়মিত খেলাধুলা ও শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার পরামর্শ দেন।

সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মো. সরওয়ার (অতিরিক্ত আইজি) বলেন, থানায় আগত জনগণের জন্য সেবা পরিবেশ উন্নত করা হচ্ছে। “থানায় আগত সেবা প্রত্যাশীদের সুবিধার্থে ডিউটি অফিসারের কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা স্থাপন করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “রাজনৈতিক কর্মসূচি বৃদ্ধি পাবে নির্বাচনের আগে। তাই আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে সতর্কতা ও ধৈর্যের সঙ্গে।”

২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে জবাবদিহিতার আহ্বান

ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যে উঠে আসে ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঘটনাও। তিনি বলেন, “২০১৮ সালের নির্বাচনে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। অতীতে যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।”

তিনি উল্লেখ করেন, জনগণের ভোটাধিকার যেন নিরাপদভাবে প্রয়োগ হয়, সেটিই পুলিশের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। “ভোটের দিন মানুষ যেন নিরাপদে কেন্দ্রে যেতে পারে, সেটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,” বলেন তিনি।

পুলিশের দায়িত্ব ও জনগণের আস্থা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের সময় পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য জনআস্থা পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক বার্তা দিতে পারে। তবে মাঠপর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যেই রাজধানীতে রাজনৈতিক কার্যক্রম বেড়েছে। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক দিকনির্দেশনা ও নিরপেক্ষ ভূমিকা আগামী নির্বাচনের সফলতার অন্যতম পূর্বশর্ত।

পুলিশের মানসিক প্রস্তুতি ও মনোবল বৃদ্ধির তাগিদ

সভায় ডিএমপি কমিশনার সদস্যদের মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময় প্রচুর চাপ থাকে, কিন্তু আমাদের মনোবল হারানো যাবে না। জনগণ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের।”

তিনি আরও যোগ করেন, “দায়িত্ব পালনের সময় শৃঙ্খলা ও মানবিকতার মিশ্রণই হতে হবে আমাদের পরিচয়। আইন প্রয়োগের সময় যেন মানবিক মূল্যবোধ বিসর্জন না দিতে হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”

সামনে কী হতে পারে

রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রচারণা যতই জোরদার হবে, রাজধানীতে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জও তত বাড়বে। তাই ডিএমপির এই নির্দেশনা নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি পুলিশ বাহিনী নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে, তবে নির্বাচনী পরিবেশ অনেক বেশি স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে। অন্যদিকে, কোনো পক্ষপাত বা অপব্যবহার দেখা দিলে তা পুরো নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় পরিষ্কার বার্তা গেছে — জনগণের নিরাপত্তা ও ভোটাধিকার রক্ষাই পুলিশের মূল দায়িত্ব। এখন দেখার বিষয়, মাঠপর্যায়ে পুলিশ কতটা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে এবং ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধারে কতটা সফল হয়।

এম আর এম – ২০১৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button