বাংলাদেশ

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সহজবোধ্য করে বই প্রকাশের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

Advertisement

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন সাধারণ মানুষের জন্য সহজবোধ্য আকারে প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় যমুনায় কমিশনের সদস্যদের কাছ থেকে আট খণ্ডের প্রতিবেদন গ্রহণের পর তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “প্রতিবেদনের সহজবোধ্য একটি সংস্করণ তৈরি করতে হবে। এটি বই আকারে প্রকাশ করা উচিত। যাতে সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পড়তে পারে এবং সহজে বুঝতে পারে। তারা অন্যদেরও এটি বুঝিয়ে দিতে পারবে।” তিনি আরও বলেন, বইটি ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষায় প্রকাশ করা হলে আরও কার্যকর হবে।

প্রতিবেদন হস্তান্তর ও উপস্থিত কর্মকর্তারা

আজ প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

প্রতিবেদন হস্তান্তরকালে ড. আলী রীয়াজ জানান, আট খণ্ডের এই প্রতিবেদনে কমিশনের কার্যপ্রক্রিয়া, প্রেক্ষাপট, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে প্রাপ্ত লিখিত প্রস্তাবনা, সাধারণ মানুষের মতামত, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কমিশনের পক্ষ থেকে পাঠানো স্প্রেডশিট এবং সব ধরনের আলোচনা ও সংলাপ লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে এই প্রতিবেদন দেশে-বিদেশে গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে উঠবে।

প্রতিবেদন সহজবোধ্য করার প্রয়োজনীয়তা

প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, প্রতিবেদনকে কেবল কর্মকর্তাদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের জন্যও ব্যবহারযোগ্য করা জরুরি। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে এটি যেন শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যিক পাঠ্য হয়ে যায়। তরুণ প্রজন্ম বইটি পড়বে, নিজে জানবে এবং তাদের বাবা-মাকেও জানাবে।”

এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে। একই সঙ্গে এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও অংশগ্রহণকে শক্তিশালী করবে।

প্রতিবেদন প্রকাশের দিকনির্দেশনা

প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, বইটি প্রকাশের সময় বিষয়বস্তুকে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে। মূল প্রতিবেদন থেকে তথ্য ও বিশ্লেষণ সংক্ষেপে তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক উদাহরণ ও চিত্র সংযুক্ত করা যেতে পারে।

বইটি প্রকাশ করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে:

  • বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের জন্য সহজবোধ্য
  • ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় প্রকাশ
  • পাঠকদের জন্য আকর্ষণীয় ও প্রাসঙ্গিক উদাহরণ অন্তর্ভুক্ত
  • শিক্ষার্থীরা বইটি পড়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বোঝার সক্ষমতা অর্জন করবে

কমিশনের কার্যক্রম ও প্রেক্ষাপট

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ২০২৫ সালের জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশসহ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করেছে। কমিশন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে, সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মতামত সংগ্রহ করেছে।

প্রতিবেদন আট খণ্ডে বিভক্ত এবং এতে কমিশনের সব ধরনের সভা, কার্যবিবরণী, প্রাপ্ত প্রস্তাব এবং বিশ্লেষণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করবে।

বিশ্লেষক ও শিক্ষাবিদদের মতামত

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রতিবেদনকে সহজ ভাষায় প্রকাশ করা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, এটি পাঠ্যবই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম ও অংশগ্রহণমূলক মনোভাব বৃদ্ধি পাবে।

একই সঙ্গে গবেষকরা মনে করেন, প্রতিবেদনটি ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় প্রকাশ করা হলে আন্তর্জাতিক গবেষণা ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অবদান দৃঢ় হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বান অনুসারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনকে সহজবোধ্য বই আকারে প্রকাশ করা হবে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যিক পাঠ্য হতে পারে এবং সাধারণ জনগণও এতে অন্তর্ভুক্ত তথ্য ও প্রক্রিয়া সহজে বুঝতে পারবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এম আর এম – ১৯৯৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button