অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে দেশের ভেতর ও বাইরে নানা অপশক্তি কাজ করবে। তিনি বলেন, “বড় শক্তি নিয়ে তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণও আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে, তবে যত ঝড়-ঝাপ্টা আসুক তা অতিক্রম করতে হবে।”
এই মন্তব্য তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত আলোচনার সময় জানান। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সচিব, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন প্রস্তুতির সময়সূচী
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন, নির্বাচনের প্রাথমিক কার্যক্রম আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া আগামী ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচনকালীন পদায়ন শুরু হবে।
জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব বণ্টনের জন্য তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং শ্বশুরবাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনদের এলাকায় কোনো পদায়ন করা হবে না। গত তিন নির্বাচনে যারা রিটার্নিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট বা প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের এবারের নির্বাচনে রাখা হবে না।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, জেলা পর্যায়ে পদায়ন কার্যক্রম স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ রাখার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন বানচালের সম্ভাব্য অপশক্তি
প্রধান উপদেষ্টা সতর্ক করেছেন, দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে নির্বাচনের ওপর প্রভাব বিস্তার বা বানচালের চেষ্টা হতে পারে। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো, মিথ্যা প্রচারণা এবং মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করা তাদের উদ্দেশ্য হতে পারে।
এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় কমিটি গঠন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে।
নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা
নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণকে নিরাপদ রাখা প্রধান উপদেষ্টার অগ্রাধিকার। বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাকে মাঠ পর্যায়ে পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী কেন্দ্র, পোলিং স্টেশন এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম ও তথ্য নিয়ন্ত্রণ
প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় ভেতরে-বাইরে থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার বা ‘এআই’-ভিত্তিক ভুল তথ্য ছড়ানো হতে পারে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিজিটাল তথ্য পর্যবেক্ষণ, সতর্কবার্তা প্রচার এবং মিসইনফরমেশন প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হবে। জনগণকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করা এবং স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করা এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
পূর্বপ্রসঙ্গ ও বিশ্লেষণ
বাংলাদেশে নির্বাচনের ইতিহাসে বিভিন্ন সময় ভেতরের বা বাইরের অপশক্তি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, প্রধান উপদেষ্টার সতর্কবার্তা সময়োপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিরাপত্তা, পদায়ন প্রক্রিয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে তথ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও জনমত সুরক্ষা সম্ভব। তবে প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণ সচেতন ও দায়িত্বশীল থাকতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে নির্বাচনের ওপর প্রভাব বিস্তার বা বাধা আসতে পারে।
নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তি রোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও নিরাপদ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সব প্রস্তুতি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
এম আর এম – ১৯৯৩,Signalbd.com



