বাংলাদেশ

এস আলমের আরও ৪৬৯ একর জমি ক্রোকের আদেশ

Advertisement

ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ মঙ্গলবার মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে থাকা ৪৬৯ একর জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন। এটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে করা হয়েছে।

এর আগে ২০ অক্টোবর আদালত এস আলমের ১০৫টি কোম্পানির ৫১৩ কোটি ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেন। এছাড়া ১০ জুলাই এস আলম, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের নামে থাকা সিঙ্গাপুরের ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।

বিদেশি সম্পদ এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরের তিনটি পৃথক ব্যাংকে ১৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে ১৭টি হিসাব এবং সিঙ্গাপুরের আটটি কোম্পানিতে এস আলমের শেয়ারও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

এস আলমের ছেলে আশরাফুল আলমের পাঁচটি ব্যাংক হিসাব এবং একটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। আরেক ছেলে আহসানুল আলমের নামে থাকা একটি কোম্পানির শেয়ারও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী ক্রোকের আদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

গত ২৪ জুন আদালত এস আলম ও তার স্ত্রীর নামে বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন। ১৭ জুন আরও ১৮০ কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রোক এবং ২৭ এপ্রিল ৫৫৯ কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়।

এর আগে ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা ও বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন এলাকায় থাকা জমি, ফ্ল্যাট, প্লট এবং ভবনসহ ২০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়। এক সঙ্গে ৬৮টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয়েছিল।

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর এস আলম, তার স্ত্রী, সন্তান ও ভাইসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।

দুঃদকের অনুসন্ধান ও অভিযোগ

দুদক জানিয়েছে, এস আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিধিবহির্ভূত ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে তারা দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর করার চেষ্টা হচ্ছে। আদালত শুনানি নিয়ে স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

এই নতুন ক্রোকের আদেশে এস আলম গ্রুপের ব্যবসা কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সম্পদ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত বার্তা প্রদান করা হয়েছে।

কিন্তু এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আদালতের সিদ্ধান্তের ফলে কোম্পানির পরিচালনা এবং আর্থিক লেনদেন কঠোর নজরদারির মধ্যে আসতে পারে।

তুলনা ও পরিসংখ্যান

গত বছরের শুরু থেকে এস আলম ও তার পরিবারের নামে মোট প্রায় ১,০০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক হিসাব এবং শেয়ার অবরুদ্ধের সংখ্যা মিলিয়ে শতাধিক লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।

এই ধরনের ক্রোকের আদেশ দেশের ব্যবসায়ী পরিবেশে সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশেষ করে বড় কর্পোরেট হাউসের জন্য এটি একটি নজির স্থাপন করেছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আদেশ ভবিষ্যতে অনুরূপ দুর্নীতিমূলক লেনদেন রোধে প্রভাব ফেলবে। দুঃদক এবং আদালতের যৌথ পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সঠিক বার্তা দিচ্ছে।

এস আলমের ৪৬৯ একর জমি ক্রোকের আদেশ দেশের বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় মনোভাব প্রতিফলিত করছে। এটি শুধু দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবেও কাজ করছে।

এম আর এম – ১৯৮৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button