বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত মি. গ্যাব্রিয়েল সিস্তিয়াগা ওচোয়া ডি চিনচেত্রু সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। রাজধানীর বসুন্ধরায় আমিরের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাতে উভয়পক্ষের মধ্যে বাংলাদেশ-স্পেন সম্পর্ক, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
এই সাক্ষাৎ শুধু একটি আনুষ্ঠানিক সৌজন্য বিনিময় নয়; বরং কূটনৈতিক মহলে এটি ভবিষ্যৎ সহযোগিতা এবং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
সাক্ষাতের সময় ও স্থান
সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রোববার সকাল ৯টায়। স্থান ছিল ঢাকার বসুন্ধরায় বাংলাদেশ জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের নিজস্ব কার্যালয়।
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা। অন্যদিকে জামায়াত আমিরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ঢাকা মহানগর উত্তরের মেডিকেল থানার আমির ডা. এসএম খালিদুজ্জামান এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান।
আলোচনার মূল বিষয়বস্তু
১. ডা. শফিকুর রহমানের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর
প্রথমেই রাষ্ট্রদূত স্পেন সরকারের পক্ষ থেকে ডা. শফিকুর রহমানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। তিনি জামায়াত আমিরের সাম্প্রতিক শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
২. দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব
রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিস্তিয়াগা স্পষ্ট করেন যে, স্পেন সবসময় বাংলাদেশের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও এ সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা, প্রযুক্তি, কৃষি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সম্ভাবনা রয়েছে।
৩. অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগ
আলোচনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়েও মতবিনিময় হয়। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে উভয়পক্ষ গুরুত্বারোপ করেন।
৪. রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও আলোচনা হয়। রাষ্ট্রদূত বলেন, স্পেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমর্থন করে এবং বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ প্রত্যাশা করে।
৫. আন্তর্জাতিক ইস্যু
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও স্পেনের পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন ও মানবাধিকার প্রশ্নে উভয় দেশই একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বৈঠক অত্যন্ত আন্তরিক ও গঠনমূলক পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করা, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশের গণতান্ত্রিক বিকাশে এ ধরনের আলোচনার গুরুত্ব অপরিসীম।
স্পেন-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপট
অর্থনৈতিক সম্পর্ক
বাংলাদেশ ও স্পেনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (RMG) স্পেনে ব্যাপক জনপ্রিয়। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে স্পেন বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম পোশাক আমদানিকারক দেশ।
অভিবাসন ও প্রবাসী বাংলাদেশি
স্পেনে বর্তমানে প্রায় ৭০-৮০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এরা মূলত ব্যবসা, রেস্তোরাঁ ও ছোটখাটো উদ্যোক্তা হিসেবে সক্রিয়। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নয়, জনগণের মধ্যেও দৃঢ়।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি
স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময়ও দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করছে।
কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাক্ষাতের তাৎপর্য
এই সাক্ষাৎ কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সৌজন্য সাক্ষাৎ সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
এ ধরনের সাক্ষাৎ থেকে স্পষ্ট হয় যে, আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানবাধিকার ইস্যুগুলোর প্রতি গভীর আগ্রহী।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
১. দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি – বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আইটি এবং কৃষিখাতে।
২. রপ্তানি সম্ভাবনা সম্প্রসারণ – গার্মেন্টস ছাড়াও হস্তশিল্প, চামড়াজাত পণ্য ও কৃষিপণ্য স্পেনে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।
৩. সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার – পারস্পরিক শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাড়ানো যেতে পারে।
4. গণতান্ত্রিক সমর্থন – রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র চর্চায় স্পেন বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান ও স্পেনের রাষ্ট্রদূতের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই সৌজন্য সাক্ষাৎ নিঃসন্দেহে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের এক ইতিবাচক অধ্যায়। শুধু রাজনৈতিক সৌজন্য বিনিময় নয়, বরং অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ-স্পেন সম্পর্ক আগামী দিনে আরও সুদৃঢ় হবে—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উভয়পক্ষ।
MAH – 13051 I Signalbd.com



