নয়জন পুলিশ সুপার (এসপি) এবং দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বদলি করেছে সরকার। একই প্রজ্ঞাপনে দুই কর্মকর্তার বদলির আদেশ বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশে বড় পরিসরে প্রশাসনিক রদবদল করা হয়েছে। এতে পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার নয়জন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার দুইজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি, দুই কর্মকর্তার পূর্বে জারিকৃত বদলির আদেশ বাতিল করেছে সরকার।
রোববার (২৬ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান।
বদলির বিস্তারিত: কারা কোথায় যাচ্ছেন
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, যেসব পুলিশ সুপারকে বদলি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন এসবির এম এম হাসানুল জাহীদ, যিনি রাজশাহীর সারদায় বদলি হয়েছেন। পিবিআইয়ের মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন তালুকদারকে পাঠানো হয়েছে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে।
টাঙ্গাইল পিটিসির আ ফ ম আল কিবরিয়াকে বদলি করা হয়েছে সিআইডিতে, গাইবান্ধা ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের মো. আবু সায়েম প্রধানকে রংপুর পিটিসিতে, ডিএমপির মো. শফিকুল ইসলামকে পুলিশ সদর দফতরে, এবং পুলিশ স্টাফ কলেজের কাজী মুহাম্মাদ শফি ইকবালকেও সিআইডিতে পদায়ন করা হয়েছে।
এছাড়া, পিবিআইয়ের মুহাম্মদ কামাল হোসেনকে গাইবান্ধা ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে, এপিবিএনের উক্য সিংকে পিবিআইতে, এবং জাতিসংঘ মিশন থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাগত মুহাম্মদ ইসমাইল হুসাইনকে পুলিশ সদর দফতরে বদলি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের মধ্যে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত সনাতন চক্রবর্তীকে বদলি করা হয়েছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে, এবং শিল্পাঞ্চল পুলিশের মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানকে শেরপুর ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
যাদের বদলির আদেশ বাতিল
একই প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তার বদলির আদেশ বাতিল করা হয়েছে। তারা হলেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু ইউসুফ এবং র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহিদুর রহমান।
এর আগে তাদের পুলিশ সদর দফতরে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেই আদেশ বাতিল করা হয়েছে।
প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কেন গুরুত্বপূর্ণ
পুলিশ বাহিনীর প্রশাসনিক কাঠামোয় নিয়মিত রদবদল সাধারণ একটি প্রক্রিয়া। কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আসে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের রদবদল নতুন দায়িত্বে কর্মীদের উদ্দীপনা বাড়ায় এবং পেশাগত অভিজ্ঞতা বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
অন্যদিকে, মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চলমান প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবেই এই রদবদল করা হয়েছে। বিশেষ করে, মাঠপর্যায়ে কার্যকর আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয় জোরদার করতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের একাধিক পদায়ন
এর আগে চলতি মাসের শুরুতেও কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বড় পরিসরে এই পরিবর্তন এসেছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন মিশন, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত ইউনিটে নতুন পদায়নের মাধ্যমে প্রশাসনিক কাঠামো আরও সুসংগঠিত করার চেষ্টা চলছে।
বিশেষ করে, সিআইডি ও পিবিআইয়ের মতো অনুসন্ধানমূলক সংস্থায় নতুন কর্মকর্তাদের যুক্ত করার মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রমের গতি বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
রদবদলে প্রভাব: মাঠপর্যায়ে নতুন সমন্বয়
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই রদবদল মানেই নতুন চ্যালেঞ্জ এবং নতুন দায়িত্ব।
পুলিশ বাহিনীর এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিটি বদলির পেছনে থাকে প্রশাসনিক প্রয়োজন এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্য। নতুন পদে দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তারা তাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কাজের গতি বাড়াবেন।”
এছাড়া, রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহের মতো অঞ্চলগুলোতে নতুন কর্মকর্তাদের পদায়নের মাধ্যমে সেসব অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
বদলি প্রশাসনের গতি বাড়ায়
প্রশাসনবিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সময়োপযোগী রদবদল সরকারকে কার্যকর প্রশাসন গঠনে সহায়তা করে।
তারা বলছেন, নিয়মিত পদায়ন কর্মকর্তাদের নতুন পরিবেশে কাজ করার সুযোগ দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে প্রশাসনের সক্ষমতা ও সেবা মান বাড়ায়।
একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “রদবদল কোনো শাস্তি নয়; এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে একদিকে নতুন চিন্তা আসে, অন্যদিকে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আরও বিস্তৃত হয়।”
পুলিশ প্রশাসনের সাম্প্রতিক এই রদবদলকে অনেকেই দেখছেন একটি স্বাভাবিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসেবে। এতে একদিকে নতুন নেতৃত্বের সুযোগ তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে বিভিন্ন ইউনিটে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আদানপ্রদান নিশ্চিত হবে।
তবে সময়ই বলে দেবে, এই বদলির মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে কতটা পরিবর্তন আসে।
এম আর এম – ১৯৪৫,Signalbd.com



