বাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু

Advertisement

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৪৩ জন রোগী, চলতি বছরে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৬৩ জনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আবহাওয়া ও বৃষ্টির ধারা ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে এক হাজার ১৪৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৪৪০ জনে, আর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬৩।

ডেঙ্গুর সর্বশেষ পরিস্থিতি: ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১১৪৩, মৃত ৪

রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। এদের মধ্যে অধিকাংশই রাজধানী ও এর আশপাশের অঞ্চলের বাসিন্দা।

অন্যদিকে, নতুন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকার বাইরে ৮২৪ জন এবং রাজধানী ঢাকায় ৩১৯ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন আক্রান্ত ১২৪ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ৫৭ জন রোগী।

বিভাগভিত্তিক ডেঙ্গু আক্রান্তের চিত্র

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে ১২৬ জন, চট্টগ্রামে ১০৪ জন, খুলনায় ৩১ জন, ময়মনসিংহে ৪৭ জন এবং রাজশাহীতে ৬৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় তুলনামূলকভাবে আক্রান্তের হার কিছুটা কমলেও, বিভাগীয় শহরগুলোতে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে।

চলতি বছরে মোট ৬১ হাজার ৩৯৩ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন, তবে এখনও চিকিৎসাধীন আছেন প্রায় ৪ হাজারের বেশি রোগী।

বর্ষা মৌসুমেই সর্বোচ্চ সংক্রমণ

বাংলাদেশে প্রতি বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়ে যায়। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে রেকর্ডসংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যার ধারা এবারও বজায় রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে জমে থাকা স্বচ্ছ জলে এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়, যা সংক্রমণের মূল কারণ।

গত বছর একই সময়ে মোট ২৩০ জন মারা গিয়েছিলেন, অর্থাৎ এ বছর মৃত্যুর হার আগের তুলনায় বেশি। এতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

রোগের বিস্তার রোধে যা করছে কর্তৃপক্ষ

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় মশা নিধন কর্মসূচি জোরদার করেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়ার্ডে ফগিং ও লার্ভা ধ্বংস অভিযান চলছে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, জনসচেতনতা বাড়াতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।
তবে অনেক এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিয়মিত ফগিং কার্যক্রমে গাফিলতি রয়েছে এবং অনেক জায়গায় জমে থাকা পানিতে লার্ভা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা: ডেঙ্গু এখন সারাবছরের ঝুঁকি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু এখন আর মৌসুমি সমস্যা নয়, বরং সারাবছরই এটি হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিগত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শীতকালেও sporadic (বিচ্ছিন্ন) সংক্রমণ ঘটছে। তাই শুধু বর্ষা নয়, সারা বছরই মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তারা আরও বলেন, “মানুষের সচেতনতা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো জায়গায় ৩ দিনের বেশি পানি জমতে দেওয়া যাবে না। এডিস মশা এমন পানিতেই ডিম পাড়ে।”

হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শনে দেখা গেছে, ডেঙ্গু রোগীর চাপ এখনও কমেনি। অনেক সরকারি হাসপাতালে বেড সংকটের কারণে করিডোরে অতিরিক্ত বেড বসানো হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, বেশিরভাগ রোগী জ্বর, রক্তপাত ও হেমাটোক্রিটের ওঠানামায় ভুগছেন। তবে দ্রুত চিকিৎসা পেলে বেশিরভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে উঠছেন।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, ডেঙ্গু সন্দেহ হলে ঘরে না থেকে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য।

সাধারণ জনগণের করণীয়

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জনগণকে নিজেদের বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। বালতিতে, টবের নিচে, রেলিংয়ে বা ছাদে জমে থাকা পানিতে যেন মশা জন্মাতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, ফুলের টব, কুলার বা ফ্রিজের ট্রের পানি প্রতিদিন পরিষ্কার করা, মশারি ব্যবহার ও শরীর ঢেকে রাখা পোশাক পরার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ডেঙ্গু এখন শুধু স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ও নাগরিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়।
বৃষ্টির মৌসুম এখনও পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় আগামী কয়েক সপ্তাহ ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এম আর এম – ১৯৪৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button