বাংলাদেশ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ

Advertisement

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান (চিফ অব জয়েন্ট স্টাফ কমিটি – সিজেসিসি) জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা-এর মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর ২০২৫) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।

দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার নতুন দিগন্ত

সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন,

“বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জনগণের সম্পর্কের গভীর বন্ধনে আবদ্ধ। দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করা জরুরি।”

জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের প্রশংসা করে জানান,

“আমরা চাই বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একে অপরের নির্ভরযোগ্য অংশীদার হোক। আমাদের দেশগুলোর মধ্যে সম্ভাবনা অপরিসীম।”

তিনি বলেন, পাকিস্তানের করাচি ও বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মধ্যে দ্বিমুখী নৌপথ ইতোমধ্যে চালু হয়েছে, যা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও সহজ করবে।
এছাড়া অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা–করাচি সরাসরি আকাশপথ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও তথ্য-নির্ভর বিশ্বে নতুন চ্যালেঞ্জ

বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে চলমান উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন দুই নেতা।
তাঁরা মনে করেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সংঘাত নিরসন, শান্তি ও মানবিক নিরাপত্তা রক্ষায় আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

ড. ইউনূস বলেন,

“আজকের বিশ্বে ভুয়া খবর, বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করা হচ্ছে। এই বিপদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ঐক্য ও সহযোগিতা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।”

জেনারেল মির্জাও তথ্য নিরাপত্তা ও সাইবার জগতে উদীয়মান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

আলোচনায় ছিল বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা

বৈঠকে দুই দেশের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বর্তমানে বছরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার হলেও এর সম্ভাবনা তিনগুণেরও বেশি
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, ও হালকা প্রকৌশল পণ্য পাকিস্তানে রপ্তানির সুযোগ বাড়ছে, অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে রাসায়নিক, যন্ত্রাংশ ও কৃষিজ পণ্য আমদানি হতে পারে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা প্রসঙ্গে জেনারেল সাহির বলেন,

“আমাদের সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি বিনিময় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় পারস্পরিক সহায়তা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।”

ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী মিশনে বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় দেশ, তাই শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে অভিজ্ঞতা বিনিময় উভয় দেশের জন্যই উপকারী হবে।

অতীতের সম্পর্ক থেকে বর্তমানের পথচলা

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক একসময় জটিলতার মধ্যে থাকলেও গত এক দশকে উভয় দেশ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়েছে
২০১৯ সালে দুই দেশের বাণিজ্যিক পর্ষদ গঠন, ২০২২ সালে “বাংলাদেশ–পাকিস্তান বিজনেস ফোরাম” উদ্বোধন এবং ২০২৪ সালে কনস্যুলার সেবায় নতুন চুক্তি — এসব পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সহযোগিতা শুধু দ্বিপাক্ষিক নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে

উপস্থিত ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা

সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন —

  • ড. খলিলুর রহমান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
  • লামিয়া মোরশেদ, সিনিয়র সচিব ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক
  • ইমরান হায়দার, বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার

এ ছাড়া পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ও প্রতিরক্ষা খাতের সঙ্গে সহযোগিতার বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: নতুন যুগের সূচনা?

দুই দেশের আলোচনার মূল বার্তা ছিল —
“সহযোগিতা, শান্তি ও আস্থা।”
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুই দেশই এখন উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিতে নতুন দিগন্তে পা রাখছে।
করাচি–চট্টগ্রাম নৌপথ চালুর পর ঢাকা–করাচি আকাশপথ চালু হলে উভয় দেশের বাণিজ্য আরও গতিশীল হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এ ধরনের যোগাযোগ বৃদ্ধির ফলে শুধু পণ্য বাণিজ্য নয়, মানুষে–মানুষে সংযোগ, সংস্কৃতিগত বিনিময় ও পর্যটন শিল্পেও ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

শান্তি, স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক আস্থার বার্তা

ড. ইউনূস ও জেনারেল মির্জার এই বৈঠক দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এক নতুন কূটনৈতিক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দুই দেশের নেতারা বিশ্বাস করেন —
একটি সহযোগিতামূলক, তথ্যনির্ভর ও শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে পারস্পরিক আস্থা সবচেয়ে বড় সম্পদ।

ড. ইউনূসের ভাষায়,

বাংলাদেশ সর্বদা শান্তি, সংলাপ ও পারস্পরিক সম্মানের পক্ষে। আমরা চাই আমাদের প্রতিবেশীরা সুখে–শান্তিতে থাকুক। একে অপরের সহযোগিতায়ই আমরা একটি স্থিতিশীল অঞ্চল গড়ে তুলতে পারব।”

MAH – 13492 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button